২১ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৩৬ পূর্বাহ্ন, ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শুক্রবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
অনলাইন ডেস্ক:: সিলেটের গোয়াইনঘাটে বৃহস্পতিবার(১৮ জুন) করোনার উপসর্গ নিয়ে এক ব্যক্তি মৃত্যুর পর রাস্তায় ঢলে পড়েছিলেন। কিন্তু সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেননি। এমন সময় ওই ব্যাক্তির আছে এগিয়ে এলো ‘মানবিক পুলিশ’।
খবর পেয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিনের নির্দেশে বৃষ্টিতে ভিজে লাশ উদ্ধার করা থেকে শুরু করে জানাজা, কবর খোঁড়া, দাফন সবই করেছে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ। অতীতে পুলিশকে নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করলেও বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সিলেটে পুলিশকে প্রায় প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে মানবিক ভূমিকায়। এমন পুলিশকেই সিলেটের মানুষ দেখতে চান।
আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশ ছিল প্রথম প্রহরের প্রতিরোধ যোদ্ধা এবং এই করোনা পরিস্থিতিতেও যেন পুলিশই সম্মুখযোদ্ধার ভূমিকায় অবতীর্ণ। এ সময়টা এত কঠিন আর অবাস্তব যে অনেক মানুষ তার স্বাভাবিক মানবিকতাবোধ হারিয়েছে।
নিজের রক্তের সম্পর্ককে অস্বীকার করছে। আর সেটা এমনই যে কোনো কোনো স্থানে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশ গ্রহণ তো দূরে থাক জানাজা পড়ানোর জন্যও পরিবারের কেউ ছিল না। সেখানে পুলিশের সদস্যরা জানাজা পড়েছেন, কবর খুঁড়েছেন এবং দাফন করেছেন।
জানা গেছে, গতকাল ১৭ জুন (বুধবার) সন্ধ্যায় সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের হাজীপুর গ্রামের জাহের মিয়ার ছেলে নাজিম উদ্দিন (৪৫) করোনা উপসর্গ নিয়ে ওষুধ কেনার জন্য বাড়ি থেকে বের হন।
নাজিম উদ্দিন বাড়ি ফেরার পথে রাধানগর-হাজীপুর রাস্তায় জাফলং চা-বাগান সংলগ্ন এলাকায় রাস্তার পাশে মারা যান। করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে নাজিম মারা যাওয়ায় স্থানীয়রা তার লাশে ভয়ে হাত দেননি।
পরে বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) ভোরে রাধানগর-হাজীপুর রাস্তায় অজ্ঞাতনামা একটি লাশ পড়ে আছে খবর পায় গোয়াইনঘাট থানার পুলিশ। খবরটি চলে যায় সিলেটের এসপি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম এর কাছেও।
এরপর পুলিশ সুপার তাৎক্ষণিকভাবে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুল আহাদকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেন।
পরে গোয়াইনঘাট থানার পুলিশ জাফলং চা-বাগান সংলগ্ন এলাকা থেকে নাজিম উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করেন।
পরবর্তীতে বাদ আসর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুল আহাদের নেতৃত্বে মরহুমের জানাজার নামাজ পড়ানো হয়। এরপর পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করে পুলিশ।
কবর খোঁড়ার কাজে পুলিশকে এলাকার কয়েকজন লোক সহায়তা করেন বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর ও গণমাধ্যম) মো. লুৎফর রহমান।
শুধু কি তাই? সরকার ঘোষিত ঘরে থাকার নির্দেশ এবং সামাজিক দূরত্ব ও হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতকরণের দায়িত্বের পাশাপাশি পুলিশ এমন কোনো কাজ নেই যা করছে না।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ও তার পরিবারের পাশে সহযোগিতার হাত নিয়ে শুরু থেকেই দাঁড়িয়েছে গোয়াইনঘাট থানার পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি পুলিশ নিজের বেতন, বোনাস এমনকি রেশনের অংশ দিয়েও দুস্থ এবং বিপাকে পড়া মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়ার কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে পুলিশ সদস্যরা পালন করছেন একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা।
এ বিষয়ে সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, সিলেট জেলার প্রতিটি থানার পুলিশকে বলা হয়েছে রোগীকে হাসপাতালে আনা-নেয়াসহ যেকোনো মানবিক কাজে যেন সহযোগিতা করা হয়। সেই মোতাবেক পুলিশ সদস্যরাও কাজ করছেন। এমনকি তারা মানবিক ত্রাণ সহায়তা নিয়েও বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, সাধারণ মানুষও এখন যে কোনো প্রয়োজনে পুলিশ ছাড়া আর কাউকে আপন ভাবতে পারছে না। এ যে ভালোবাসাটা সাধারণ মানুষ দেখাচ্ছেন সেটা এমনি এমনি নয়। এই কঠিন সময়ে পুলিশ সদস্যরা তাদের কাজের মাধ্যমে সেই ভালোবাসাটা অর্জন করেছেন।