২০ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৩৬ অপরাহ্ন, ২৮শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, বৃহস্পতিবার, ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মো: আমিনুল ইসলাম ::–
করোনা ভাইরাস যদিও চীনের উহান শহর থেকে শুরু হয়েছে কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যে তা আমেরিকা, ইউরোপসহ সারা বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ইউরোপ মহাদেশ করোনা প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জেলখানায় আটক কারাবন্দিরা। এ কারণে বহু দেশের জেলখানা থেকে অনেক বন্দিকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে করুণ অবস্থায় রয়েছে ইসরাইলের জেলখানায় আটক ফিলিস্তিনি বন্দিরা।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১৯৪৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদেরকে গ্রেফতার ও বন্দির সংখ্যা বহুগুণে বেড়েছে। ৪৮ সাল থেকে এ দীর্ঘ সময়ে এ পর্যন্ত প্রায় ১৮টি জেলখানা নির্মাণ করেছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনি বন্দি ও শরণার্থী বিষয়ক কমিটির কর্মকর্তা আব্দুন নাসের ফারওয়ানে জানিয়েছেন, বর্তমানে পাঁচ হাজার ৮০০ নারী ও পুরুষ বন্দি ইসরাইলের বিভিন্ন কারাগারে আটক রয়েছে। এসব বন্দির মধ্যে ৫৪০জনকে একবার কিংবা একাধিকবার আজীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ৫৮০০ বন্দির মধ্যে ৬২ জন নারী এবং ৩০০ জন রয়েছে নির্ধারিত বয়সসীমার নীচে অর্থাৎ শিশু। ফিলিস্তিনি বন্দি ও শরণার্থী বিষয়ক কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ১৯৬৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২২৩ জন ফিলিস্তিনি ইসরাইলের বিভিন্ন জেলখানায় শাহাদাত বরণ করেছে। এতে আরো বলা হয়েছে, ৬৪জন বিনা চিকিৎসায়, ৭৩ জন নির্যাতনের কারণে, ৭৫জন আত্মহত্যা এবং সাত জন বন্দি গুলিবিদ্ধ হয়ে শাহাদাত বরণ করেছেন। সামি আবু দিয়াক নামে ৩৬ বছর বয়সী একজন ফিলিস্তিনিকে ভিন্ন ভিন্ন মামলায় তিন বার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
ইসরাইলি জেলখানাগুলোতে আটক ফিলিস্তিনিদের ওপর নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ব্যবস্থা রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহের জন্য তাদের ওপর এ নির্যাতন চালানো হয়। ২০১৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ইসরাইলের তৎকালীন বিচারমন্ত্রী ইলাত শাকেদ বলেছিলেন, মানবাধিকার উপেক্ষা করে হলেও ইসরাইল শুধুমাত্র ইহুদিদের জন্য হওয়া উচিত। এদিকে, ফিলিস্তিনি বন্দি ও শরণার্থী বিষয়ক দফতরের প্রধান রাফআত হামদুনে বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনি বন্দিদের অবস্থা খুবই নাজুক এবং তাদের ওপর অকথ্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘ইসরাইলই একমাত্র যে কিনা বন্দিদের ওপর নির্যাতন চালানোকে বৈধ বলে মনে করে এবং এমন সব পন্থায় তারা নির্যাতন চালায় যা আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ। আটকাবস্থার শুরু থেকেই তারা বিভিন্ন পন্থায় নির্যাতন চালানো শুরু করে। বন্দিদের মাথায় ময়লাযুক্ত ও দুষিত প্যাকেট পরিয়ে দেয়া, দিনের পর দিন ঘুমাতে না দেয়া, চিকিৎসা না দেয়া, বন্দিদেরকে হিমাগারে আটকে রাখা, দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা, ইসরাইলের গুপ্তচর হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করা, তাদের মাথায় গরম ও ঠাণ্ডা পানি দেয়া, কানের পর্দা ফাটানো বিকট শব্দ শুনতে বাধ্য করা, টয়লেটে যেতে না দেয়া প্রভৃতির মাধ্যমে বন্দিদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়।
ইসরাইলের কারাগারে আটক ফিলিস্তিনি বন্দিদের সাথে অমানবিক আচরণের আরেকটি ভয়াবহ তথ্য হচ্ছে তাদের ওপর বিভিন্ন ধরনের বিপজ্জনক জৈব পরীক্ষা চালানো হয়।
ইসরাইলি পার্লামেন্টের বিজ্ঞান গবেষণা বিষয়ক কমিটির প্রধান দাইলা ইজিক ১৯৯৭ সালে এ কথা ফাঁস করে দেন যে প্রতি বছর তারা ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর প্রায় এক হাজার ধরণের মেডিকেল পরীক্ষা চালায়। জর্দানের লেখক আব্দুল্লাহ ক’ক এক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় ইসরাইলের কারাগারে আটক ফিলিস্তিনি বন্দিদেরকে বেআইনিভাবে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ পরীক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয়। ইসরাইলিরা যখনই নতুন কোনো ওষুধ তৈরি করে প্রথমেই তা ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর পরীক্ষা চালায়।’
ফিলিস্তিনি বন্দিদেরকে ইচ্ছামত নানা ধরনের খাদ্য খাবার দিয়ে পরীক্ষা করা হয়। এ কারণে বন্দিরা প্রায়ই জেলখানায় তাদের খারাপ অবস্থার প্রতিবাদ জানিয়ে গণঅনশন করে। ইসরাইলি পার্লামেন্ট ২০১৫ সালের জুলাইয়ে বন্দিদের জন্য বিশেষ খাদ্য আইন পাশ করে। ওই আইনে ফিলিস্তিনি বন্দিরা যখন মূমূর্ষ অবস্থায় থাকবে