২১ নভেম্বর ২০২৫, ১১:২৫ অপরাহ্ন, ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শুক্রবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নোটিশ
জরুরী ভিত্তিতে কিছুসংখ্যক জেলা-উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হবে যোগাযোগ- ০১৭১২৫৭৩৯৭৮
সর্বশেষ সংবাদ :
ছারছীনার পীর সাহেব হুজুরের বরিশাল আগমন উপলক্ষে আগামীকাল শনিবার ঈছালে ছওয়াব ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় উদ্ধার হওয়া তিনটি তক্ষক বনায়ন ও নার্সারি এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বাগানে অবমুক্ত ফাতেমা জোহরা আদিবার আন্তর্জাতিক সাফল্য; অস্ট্রেলিয়ার নিবন্ধিত আর্কিটেক্ট স্ত্রীকে নির্যাতনের মামলায় বরগুনার শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রবিউল হত্যা মামলায় নিরপরাধদের জড়ানোর অভিযোগে বাবুগঞ্জে বিএনপি’র একাংশের সংবাদ সম্মেলন বাবুগঞ্জের ছাত্রদল নেতার খুনিদের গ্রেপ্তার পরবর্তী দৃষ্টান্ত ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ চুয়াডাঙ্গায় ৩ তক্ষকসহ গ্রেফতার ১জন বাবুগঞ্জ এলজিইডি’র এলসিএস কমিউনিটি অর্গানাইজার সানজিদার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার ও হয়রানির অভিযোগ জোটের চাপ নাকি অভ্যন্তরীণ কোন্দল? বরিশাল -৩ আসনে এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএনপি। ভোটারদের মাঝে ‘ভিআইপি চমক’-এর গুঞ্জন বাবুগঞ্জে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ
মাতৃভাষা বাংলা’র লড়াইয়ের প্রথম সূত্রপাত ১৮৩৫ সালে কিন্তু ঠাঁই পায়নি ইতিহাসে

মাতৃভাষা বাংলা’র লড়াইয়ের প্রথম সূত্রপাত ১৮৩৫ সালে কিন্তু ঠাঁই পায়নি ইতিহাসে

সোহেল সানি \
মাতৃভাষা বাংলার জন্য বাঙালীর লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাসটা যেখান থেকে শুরু বা শেষ বলা হচ্ছে, আসলে তা কি সঠিক? নাকি বিকৃত এবং খন্ডিত?
ভাষা সংগ্রামকে পাকিস্তানের আমল বা ১৯৪৮ -‘৫২’র মধ্যে সীমিতকরণের ব্যাপারটি বিস্ময়কর। বিদেশী মনীষীরা এ জন্যই বাঙালীকে বলে আত্মবিস্মৃত জাতি। বাঙালীদের এই বদনাম আজও পরিপুষ্ট। আসল সত্য বা মিথ্যা থেকে আমরা বাঙালীরা বহুদূরে অবস্থান করছি। ইংরেজ আমলেও যে মাতৃভাষার জন্য লড়ার ইতিহাস রয়েছে, তার ঠাঁই নেই ভাষা আন্দোলন বা সংগ্রামের ইতিহাসে।
অথচ, ১৮৩৫ সালে মাতৃভাষা বাংলার সংগ্রামের সূত্রপাত। কলকাতা হিন্দু কলেজের ছাত্র উদয় চাঁদ সর্বপ্রথম মাতৃভাষা বাংলাকে জাতীয় বা সরকারি ভাষা হিসাবে গ্রহণের দাবি জানান এক প্রবন্ধে। কিন্তু ইতিহাসে নেই তিনি।
আশ্চর্যান্বিত হলেও কলকাতা কলেজের শিক্ষক হয়েও হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজীও’র মতো একজন প্রগতিবাদী ইংরেজ বাঙালী ছাত্রদের মাঝে দেশপ্রেম ও বিদ্রোহের চেতনা জাগিয়ে তোলেন। তাঁর অনুগামীরাই “ইয়ং বেঙ্গল” নামে একটি সংগঠনের আতœপ্রকাশ ঘটায়। উদয় চাঁদ যেমন বাংলা ভাষাকে শিক্ষা ও সরকারি কাজকর্মে বাহন হিসাবে নেয়ার দাবি জানান, তেমনি একই সময়ে আরেক ছাত্র কৈলাসচন্দ্র দত্ত এক প্রবন্ধে স্বপ্ন দেখেছিলেন যে, শতবর্ষ পরে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র গণবিদ্রোহের মুখে পড়বে এবং বিতাড়িত হবে।
ডিরোজিও ইংরেজী ভাষায় এমন একটি দেশাত্মবোধক কবিতা রচনা করেন, যা ছড়িয়ে দিতে বঙ্গানুবাদ করেন দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড়দাদা ছিলেন তিনি। “বেঙ্গল স্পেক্টেটর” নামক একটি দ্বিভাষিক মুখপত্র প্রকাশের আগেই “ইয়ং বেঙ্গল” গোষ্ঠী এ দেশে প্রথম রাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে “বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি।” এর দেখাদেখি বোম্বাইয়ে এক স্কুল শিক্ষক ফার্দুনজি নৌরজি ইয়ং বোম্বে পার্টি এবং মাদ্রাজে গজালু ল²ী নারায়ণ বাসু চেট্টি মাদ্রাজ ইয়ং পার্টি নামে সংগঠন গড়ে তোলেন।
ভারতে শিক্ষা প্রর্বতনের জনক মেকলে নিজেই খোলামেলাভাবে স্বীকার করেন, ভারতে ইংরেজী ভাষার মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষার দরজা খোলার নেপথ্যে তাঁদের একটি মাত্র উদ্দেশ্য ছিল- পাশ্চাত্য সভ্যতার অন্ধ অনুরাগী এক শিক্ষিত ভারতীয় ভদ্রবেশী সমাজ গড়ে তোলা, যারা বিপুল দরিদ্র দেশবাসীর জীবন থেকে থাকবে বিচ্ছিন্ন এবং ইংরেজ শাসনের অনুগত।
রবীন্দ্রনাথের ভাষায়ঃ “শহরবাসী একদল মানুষ সেই সুযোগে শিক্ষা পেলে, মান পেলে, অর্থ পেলে তারাই এনলাইটেন্টড আলোকিত। সেই আলোর পেছনে বাকী দেশটাতে লাগলো পূর্ণগ্রহণ। স্কুলের বেঞ্চিতে বসে যাঁরা ইংরেজী পড়া মুখস্থ করলেন, শিক্ষাদীপ্ত দৃষ্টির অন্ধতায় তাঁরা দেশ বলতে বুঝলেন শিক্ষিত সমাজকে। সেইদিন থেকে জলকষ্ট বলো,পথকষ্ট বলো, রোগ বলো, অজ্ঞানতা বলো, জমে উঠলো নিরানন্দ, নিরালোক, গ্রামে গ্রামে।”
ইংরেজ ভক্তির মোহ দ্রæত ছুটে গিয়ে দেশপ্রেমের প্রথম জাগরণ ধারালোভাবে প্রকাশ পেলো মাইকেল মধুসূদন দত্তের কবিতায় – ” হে বঙ্গ ভান্ডারে তব বিবিধ রতন/তা সবে অবোধ আমি অবহেলা করি/ পরধন লোভে মত্ত করিনু ভ্রমণ” বা রেখো মা দাসেরে মনে, এ মিনতি করি পদে।
১৮৪১ সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রধান পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মাতৃভাষা বাংলাতে সর্বপ্রথম রচনা করেন ছোটদের পড়বার মতো বই -বর্ণপরিচয়, কথামালা, বোধোদয়, বেতালপঞ্চবিংশতি। বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের সামনে তিনিই খুলে দেন এক নতুন পৃথিবীর দরজা। পৃথিবীর সমস্ত ধর্মের ভেতরে একটি মৌলিক ঐক্য আছে- রাজা রামমোহন ১৮২৮ সালে ব্রা²সমাজ জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটানোর ক্ষেত্রে রাজা রামমোহন এক জীবন্ত ইতিহাস।
“১৮৭৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর চূচুরায় বসে বঙ্কিমচন্দ্র রচনা করেন “বন্দেমাতরম” গানটি। ১৮৯৬ সালে কলকাতা কংগ্রেস অধিবেশনে নিজে সুর দিয়ে গেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। জাতীয়তার ভাবোদ্দীপক ধ্বনি বন্দেমাতরম সর্বজন পরিচিতিলাভ করে। বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী ওই ধ্বনি উচ্চারণ করে মৃত্যুবরণ করেন হাসতে হাসতে। কংগ্রেস এটাকে জাতীয় সঙ্গীতরূপে গ্রহণ করেছিল। কিন্তু মহাত্মা গান্ধীর ভারত ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন হলে নোবেল জয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “জনগণমন” গানটিকেই জাতীয় সঙ্গীতরূপে গ্রহণ করে। যে সঙ্গীতে বঙ্গদেশের কথাও উল্লেখ রয়েছে। তবে রবীন্দ্রনাথ যে বঙ্গকে বুকে ধারণ করতেন, সেই বঙ্গের অঙ্গচ্ছেদ ঘটানো হয়।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ হলে তার বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথ “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি” গানটি রচনা করেন। তার ফলে স্বদেশী আন্দোলন তীব্রতর হয়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথ কলকাতায় “বঙ্গভবন” নামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনও করেন। যে কংগ্রেস বঙ্গভঙ্গকে “বঙ্গমাতার অঙ্গচ্ছেদ” বলে ১৯১১ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট বঙ্গভঙ্গ রদ আইন পাশ করিয়ে বাংলাকে এক করেছিল, সেই কংগ্রেসই ১৯৪৭ সালে বাংলাকে পূর্বে পশ্চিমে দুই টুকরো করে। যখন ছিলেন না রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। স্বাধীনতার আগেই ১৯৪০ সালে মহাপ্রয়াণ ঘটে তাঁর। কায়েদে আজমের পাকিস্তানের ভাগে অন্তর্ভুক্ত পূর্ববাংলার বাঙালীরা ২৩ বছর সংগ্রাম শেষে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান “রবীন্দ্রনাথের আমার সোনার বাংলা” গানটিকেই জাতীয় সঙ্গীতরূপে গ্রহণ করলেও পশ্চিমবঙ্গ আজও পরাধীন! বাংলার বিভক্তি না হলে মাতৃভাষা বাংলা পৃথিবীর বুকে আরও ইতিহাস রচনা করতে পারতো। ###

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2019