২৮ মার্চ ২০২৪, ০৯:০৪ অপরাহ্ন, ১৭ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি, বৃহস্পতিবার, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নোটিশ
জরুরী ভিত্তিতে কিছুসংখ্যক জেলা-উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হবে যোগাযোগ- ০১৭১২৫৭৩৯৭৮
সর্বশেষ সংবাদ :
বরিশালে মসজিদে নামাজ চলাকালীন এসি বিস্ফারণ, কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বিশ্বের উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সমাদৃত করেছেন-পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী আগৈলঝাড়ায় সাবেক মন্ত্রী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের ১০৪তম জন্মদিন পালিত নিখোঁজ সংবাদ নিখোঁজ সংবাদ শেবাচিম হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বেতন বৃদ্ধির ধর্মঘটে জিম্মি রোগীরা গৌরনদী প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ কামাল হোসেনের দাফন সম্পন্ন বানারীপাড়ায় সিএনজি দূর্ঘটনায় চালক নিহত: ৫ যাত্রী আহত বাবুগঞ্জে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান সিলেটে ঈদকে টার্গেট করে বেড়েছে ছিনতাই ঝালকাঠি পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অংশীজন সম্মেলন অনুষ্ঠিত
অধিকাংশ ছাত্রলীগের সভাপতি সেক্রেটারির সহ এখন আওয়ামী লীগের বাইরে।

অধিকাংশ ছাত্রলীগের সভাপতি সেক্রেটারির সহ এখন আওয়ামী লীগের বাইরে।

অনলাইন ডেক্স
ছাত্রলীগ বয়সে- সত্তুর ছুঁইছুঁই। ১৯৪৮-২০১৯। স্বাধীনতার পতাকাবাহী সংগঠন কেবল নয়, ছাত্রলীগকে বলা হয়, স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের মাতৃসংগঠন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষায়”স্বাধীনতার ইতিহাস ছাত্রলীগের ইতিহাস,আর ছাত্রলীগের ইতিহাস স্বাধীনতার ইতিহাস।”
“৬২ সাল থেকে শেখ মুজিবের নির্দেশে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে গড়ে ওঠে “স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস” নামে একটি গ্রুপ। গ্রুপটি পূর্ববাংলার স্বাধীনতার সপক্ষে শেখ মুজিবের কাছ থেকে বিভিন্ন লিফলেট পেতেন। যা গভীর রাতে তারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ ছাত্রাবাসে ছড়িয়ে দিতেন। এ গ্রুপটির অগ্রভাগে ছিলেন শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান ও আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ ছাত্রলীগ নেতা। স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস বলে পরিচিত এই গ্রুপটিই “৭১-এ মুক্তিযুদ্ধকালীন ” মুজিব বাহিনী” হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। যার সঙ্গে যুক্ত হন তোফায়েল আহমেদ, আসম আব্দুর রব, শাজাহান সিরাজ প্রমুখ নেতা।
“৪৮-“৫২,”৬২’”৬৬, “৬৯, “৭১, “৮২, “৯০ প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রলীগের অবদান অবিস্মরণীয় এবং গৌরবোজ্জ্বল। জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকা, স্বাধীনতার ইশতেহার এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা খেতাব সব ছাত্রলীগের অবদান।
জন্মের ২৪ বছর পর্যন্ত ছাত্রলীগের মধ্যে নেতৃত্বের এমনকি শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এমনকি বহিষ্কারের ঘটনা ঘটলেও ছাত্রলীগ বিভক্ত হয়নি।
কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের পর- “৭২-এ যেখানে অপরিহার্য ছিলো ছাত্রলীগের ঐক্য, সেখানে শীর্ষ নেতৃত্বের মতভেদকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হয় ভাঙ্গন। যে নেতাকে কেন্দ্র করে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের জন্ম, সেই শেখ মুজিবের অনুগ্রহের লড়াইয়ে দ্বিখন্ডিত হয় ছাত্রলীগ। নেতার অনুগ্রহ এক পক্ষের অনুকূলে চলে যাওয়ায় অপর পক্ষ ছাত্রলীগের পাল্টা নেতৃত্ব সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জন্ম দেয় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ। ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি নেতৃত্ব সবর্ত্র প্রভাব ফেলে ডাকসুসহ সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর।”৮৩ সালে আদর্শগত বৈপরীত্যের দ্বন্ধে আওয়ামী লীগের একাংশের নেতৃত্বে বাকশাল পুনরুজ্জীবিত হয়। ছাত্রলীগেরও পাল্টাপাল্টি নেতৃত্বের সৃষ্টি হয়। জন্ম নেয় জাতীয় ছাত্রলীগ তবে ৯২ সালে দুই ছাত্রলীগ একীভূত হয়।
ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের অধিকাংশই হয় আওয়ামী লীগ বিরোধী নয়তো আওয়ামী লীগে টিকে থাকতে পারেননি।
বঙ্গবন্ধুর সাংগঠনিক নৈপুণ্যে রাজশাহীর নইমুদ্দিন আহমদকে আহবায়ক করার মধ্য দিয়ে ” ৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি পূর্বপাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের আত্মপ্রকাশ। শেখ মুজিবুর রহমানসহ
ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ১৫ জন। যাদের অধিকাংশ ভাষা সংগ্রামে যুক্ত ছিলেন।
ভাষা সংগ্রাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ধর্মঘটে শামিল হয়ে শেখ মুজিবসহ ২৭ জন ছাত্রনেতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত হন। কিন্তু ছাত্রলীগের আহবায়ক নইমুদ্দিন গোপনে মুচলেকা দিয়ে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে গিয়ে বহিষ্কার হন “৪৯ সালের ১৬ এপ্রিল। তিনি আওয়ামী লীগে ভিড়ে “৫৪’র নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসাবে বিজয়ী হলেও এক সময় রাজনীতিতে থেকে হারিয়ে যান।
নইমুদ্দিনের বহিষ্কারের পর শামসুল হক চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক হলেও অচিরেই দিনাজপুরের দবিরুল ইসলাম এ পদে আসীন হন। দবিরুল ইসলাম ” “হেবিয়াস কপার্স” মামলায় গ্রেফতার হলে ফরিদপুরের মোল্লা জালাল উদ্দীন ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক হন। তার সভাপতিত্বে ” ৪৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দবিরুল ইসলাম কারাগারে থেকেই ছাত্রলীগের সভাপতি এবং খালেক নেওয়াজ খান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। “৫৩ সালের দ্বিতীয় সম্মেলনে “মুসলিম” শব্দ কর্তন করে পূর্বপাকিস্তান ছাত্রলীগ নামকরণ করা হয়। সভাপতি হন কামরুজ্জামান এবং সাধারণ সম্পাদক হন এম এ ওয়াদুদ।
প্রথম সভাপতি দবিরুল ইসলাম ও প্রথম সাধারণ সম্পাদক খালেক নেওয়াজ খান “৫৪ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে যুক্তফ্রন্টের ব্যানারে আইন পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের ১৪৩ আইন পরিষদ সদস্যের মধ্যে যে ১৯ জন শেরেবাংলার কৃষক শ্রমিক পার্টিতে যোগ দেন, তাদের মধ্যে খালেক নেওয়াজ খান অন্যতম।
অপরদিকে “৫৫ সালে ছাত্রলীগের প্রথম সভাপতি দবিরুল ইসলামকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। দ্বিতীয় সভাপতি কুষ্টিয়ার কামরুজ্জামান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি আমরণ আওয়ামী লীগ করেছেন।
“৫৪ সালে ছাত্রলীগের সম্মেলনে সভাপতি হন আব্দুল মমিন তালুকদার। সাধারণ সম্পাদক পদে দ্বিতীয় মেয়াদেও নির্বাচিত হন এম এ ওয়াদুদ। এম এ ওয়াদুদ (শিক্ষা মন্ত্রী ডাঃ দীপুমনির পিতা) আওয়ামী লীগে সক্রিয়ভাবে কাজ না করলেও ইত্তেফাকের কর্মাধ্যক্ষ হিসাবে বিশিষ্ট ভুমিকাপালন করেন।
বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রতিমন্ত্রী মরহুম আব্দুল মমিন তালুকদার ছাত্রলীগের দুই মেয়াদে সভাপতি ছিলেন। তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এম এ আউয়াল। দুর্নীতির অভিযোগে আদমজী জুট মিলের ব্যবস্থাপকের পদ থেকে বরখাস্ত করেন। পরে তিনি জাসদে যোগ দেন এবং “৭৩ এর নির্বাচনে ঢাকার একটি আসনে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়ে জামানত হারান। “৫৭ সালে ছাত্রলীগের সম্মেলনে সভাপতি হন রফিকউল্লাহ চৌধুরী। সিএসপি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে আমলাজীবন বেছে নেন। বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁকে মুখ্যসচিব পদে নিয়োগ দেন, কিন্তু তিনি জ্যেষ্ঠ্যতা ক্ষুন্ন হবে মত দিয়ে কেবল সচিব হিসেবে নিয়োগ নেন। রফিকউল্লাহ চৌধুরী (স্পীকার ডঃ শিরীন শারমিন চৌধুরীর পিতা) বঙ্গবন্ধু হত্যার পর চাকুরী হারান তিনি। সাধারণ সম্পাদক
কাজী আজহারুল ইসলাম ব্যারিস্টারী পড়তে বিলেত চলে গেলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। ” ৬০ সালে ছাত্রলীগের সম্মেলনে শাহ মোয়াজ্জেম সভাপতি এবং শেখ ফজলুল হক মনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

শাহ “৭০ সালে জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ” ৭৩ সালের নির্বাচনের পর চীফ হুইপ নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খুনী মোশতাকের প্রতিমন্ত্রী এবং তার সঙ্গে মিলে ডেমোক্রেটিক লীগ গঠন করেন। পরবর্তীতে জেনারেল এরশাদের দলে যোগ দিয়ে মন্ত্রী উপপ্রধান মন্ত্রী হন। জাতীয় পার্টির মহাসচিব হওয়া শাহ মোয়াজ্জেম এরশাদকে ত্যাগ করে পাল্টা জাতীয় পার্টি গঠন করেন এবং সর্বশেষ বিএনপিতে যোগ দেন।
শেখ ফজলুল হক মনি স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস খ্যাত ছাত্রনেতা। “৭২ সালে শেখ মনির মুজিববাদ এবং সিরাজুল আলম খানের বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের দ্বন্দ্বে ছাত্রলীগ দুই টুকরো হয়। তিনি আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠাতা। বাকশালের অন্যতম সম্পাদক শেখ ফজলুল হক মনি “৭৫ এর ১৫ আগস্ট অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীসহ নিহত হন।
“৬৩ সালের সম্মেলনে কে এম ওবায়দুর রহমান সভাপতি এবং সিরাজুল আলম খান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
কে এম ওবায়দুর রহমান আওয়ামী লীগের সমাজকল্যাণ সম্পাদক ছিলেন। পরে বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খুনী মোশতাকের প্রতিমন্ত্রী হন। জেনারেল জিয়ার আমলে মন্ত্রী এবং পরে খালেদা জিয়ার আমলে বিএনপির মহাসচিব পদ থেকে বহিস্কৃত হন। জনতা দল নামে দল গঠন করলেও ” ৯৬ সালে বিএনপিতে আবার বিলীন হন। স্বাধীনতার অন্যতম নিউক্লিয়াস খ্যাত ছাত্রনেতা
সিরাজুল আলম খান বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা। “৭২ সালে তার অনুপ্রেরণায় আসম আব্দুর রব ও শাজাহান সিরাজের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগের একাংশ পাল্টা ছাত্রলীগ গঠন করে। যারা জাসদ ছাত্রলীগ হিসাবে পরিচয় লাভ করে। অপরদিকে নূরে আলম সিদ্দিকী ও আব্দুল কুদ্দুস সমর্থিত ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে যায়।
” ৬৬ সালে ছাত্রলীগের সভাপতি হন ফেরদৌস আহমেদ কোরেশি এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক। ডাকসু ভিপি ফেরদৌস আহমেদ কোরেশি আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে দূরে সরে পড়েন স্বাধীনতার আগেই। জিয়ার শাসনামলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হলেও লাইম লাইটে আসতে পারেননি। ওয়ান ইলেভেনে একটি দল গঠনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
আব্দুর রাজ্জাক স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস বলে পরিচিত। মুজিব বাহিনীরও অন্যতম অধিনায়ক। স্বাধীনতাত্তোর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়া রাজ্জাক বঙ্গবন্ধু হত্যার পর কারাগারে থেকেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। আব্দুল মালেক উকিল সভাপতি হলেও রাজ্জাকই ছিলেন সর্বেসর্বা। “৮১ সালে শেখ হাসিনা সভাপতি এবং আব্দুর রাজ্জাক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ” ৮৩ সালে তিনি বাকশাল পুনরুজ্জীবিত করলেও “৯২ সালে আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন। ” ৬৭ সালে ছাত্রলীগের সম্মেলনেও আব্দুর রাজ্জাক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। যখন সভাপতি মাজহারুল হক বাকী। মাজহারুল হক বাকী রাজনীতিতে খুব একটা সক্রিয় ছিলেন না।
“৬৮ সালে ছাত্রলীগের সভাপতি হন আব্দুর রউফ ও সাধারণ সম্পাদক খালেদ মোহাম্মদ আলী। আব্দুর রউফ বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে সংসদের হুইপ ছিলেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পেলেও ডাকসাইটে নেতা হয়ে উঠতে পারেননি। ” ৭০ এর নির্বাচনে বিজয়ী খালেদ মোহাম্মদ আলী “৭৩-এ এমপি হন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তিনিও ডাকসাইটে নেতারূপে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেননি।
“৬৯ এর শেষ দিকে ছাত্রলীগের সভাপতি হন ডাকসু ভিপি তোফায়েল আহমেদ। তার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক আসম আব্দুর রব। ” ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক তোফায়েল আহমেদ বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব ছিলেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সুপ্রতিষ্ঠিত নাম। শেখ মুজিবকে “বঙ্গবন্ধু” উপাধিটিও তার দেয়া।
আসম আব্দুর রব সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর ডাকসু ভিপি হন। মুক্তিযুদ্ধকালীন তিনি ডাকসু ভিপি হিসাবে স্বাধীনতা পতাকা উত্তোলন করেন। স্বাধীনতাত্তোর তিনি সিরাজুল আলম খানের বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নেন এবং ছাত্রলীগের পাল্টা নেতৃত্ব সৃষ্টি করেন। তিনি জাসদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। জিয়ার সামরিক আদালতে দশ বছরের সাজা লাভ করলেও পরে মুক্তিলাভ করেন। “৮৮ সালে এরশাদের ভোটারবিহীন নির্বাচনে গিয়ে বিরোধী দলের নেতা হন। ” ৯৬ সালে শেখ হাসিনার ঐকমত্যের সরকারের মন্ত্রী হন। বর্তমানে ডঃ কামাল হোসেনের ঐক্যফ্রন্টে রয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী অনলবর্ষী বক্তা হিসাবে বিশেষ পরিচিতি গড়ে উঠলেও বর্তমানে রাজনীতিতে নেই। “৭৩ সালে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ(মিজান) এর সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধকালীন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক। জাসদের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক। ” ৯৫ সালে জাসদ(সিরাজ) বিলুপ্ত করে বিএনপিতে বিলীন হন।
শাজাহান সিরাজ বহিষ্কার হওয়ার পর ইসমাত কাদির গামা সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। তিনিও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অবস্থান করে নিতে পারেননি।
“৭২ সালে ছাত্রলীগের সভাপতি হন শেখ শহীদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক হন এম এ রশীদ। শেখ শহীদ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান। পরে জেনারেল এরশাদের মন্ত্রী হন। আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জেপির তিনি মহাাসচিব। এম এ রশীদ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অবস্থান পাননি। ” ৭৪ সালে ছাত্রলীগের সম্মেলনে সভাপতি হন মনিরুল হক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শফিউল আলম প্রধান। মনিরুল হক চৌধুরী এরশাদের জাতীয় পার্টির চীফ হুইপ ছিলেন। বর্তমানে বিএনপি নেতা। মরহুম শফিউল আলম প্রধান “৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত সেভেন মার্ডারের দায়ে ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কৃত হন এবং ১৪ বছর সাজা লাভ করেন। জেনারেল জিয়ার আমলে মুক্তি পেয়ে জাগপা গঠন করেম। মৃত্যু পর্যন্ত এ দলেই ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাত্তোর ছাত্রলীগের সম্মেলনে কারাগারে থেকে সভাপতি হন আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক হওয়া বাহালুল মজনু চুন্নু আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কোনো অবস্থানে নেই। ” ৮২ সালে ছাত্রলীগের সভাপতি হন ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক আখম জাহাঙ্গীর হোসাইন। এই দুই নেতা সাবেক এমপি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তারা দীর্ঘদিন থাকলেও বর্তমানে নেই।

জালাল-জাহাঙ্গীরের পর ছাত্রলীগের সভাপতি হন আব্দুল মান্নান ও সাধারণ সম্পাদক হন জাহাঙ্গীর কবির নানক।
আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একসময়ের দাপুটে নেতা মান্নান এখন বগুড়া-১ আসনের এমপি। দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। জাহাঙ্গীর কবির নানক আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ছিলেন যুবলীগের চেয়ারম্যান। প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন।
“৮৭ সালে ছাত্রলীগের সম্মেলনে সভাপতি হওয়া সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ ” ৮৯ সালে ডাকসু ভিপি হন। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ হারান ২০০৯ সালের কাউন্সিলে। ডঃ কামাল হোসেনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসাবে তিনি এমপি হয়েছেন। তার সঙ্গে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়া আব্দুর রহমান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সাবেক এমপি। “৯০ সালে ছাত্রলীগের সম্মেলনে সভাপতি হওয়া হাবিবুর রহমান হাবিব ” ৯৬ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বিএনপিতে যোগ দেন। বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা। তার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অসীম কুমার উকিল। তিনি বর্তমানে নেত্রকোনার একটা আসনের এমপি এবং আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক। “৯১ সালে ছাত্রলীগের সভাপতি হন মোহাম্মদ শাহে আলম। তিনি সভাপতি হওয়ার আগে ডাকসুতে ভিপি প্রার্থী ছিলেন। বর্তমানে বরিশাল-২ আসনের এমপি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বাইরে রয়েছেন তিনি।
” ৯২ সালে ছাত্রলীগের সভাপতি হন মঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেই। চেয়েও মনোনয়ন পাননি। সাধারণ সম্পাদক ইকবালুর রহিমও আওয়ামী লীগে ঠাঁই পাননি। হুইপ পদ নিয়ে তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। “৯৪ সালে ছাত্রলীগের সভাপতি এ কে এম এনামুল হক শামীম সরকারের উপমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হলেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে অবস্থান পাননি সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না। পরবর্তী সভাপতি বাহাদুর বেপারী, সাধারণ সম্পাদক অজয় কর খোকন মনোনয়ন চেয়েও পাননি। নেই তারা কোনো কমিটিতেও। কমিটির বাইরে রয়েছেন সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার। সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু এমপি সম্প্রতি আড়াইহাজার থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছেন। ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদ হোসেন রিপন গাইবান্ধা-৫ আসনে মনোনয়ন চেয়ে পাননি। সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটনও কোনো কমিটিতে নেই। সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ বাগেরহাটের একটি আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম সিদ্দিকী বর্তমান শুদ্ধি অভিযানের বিভিন্ন অভিযোগে সমালোচিত। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কেবল শুরু করেছেন। ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলনে নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে তারা বরখাস্ত হয়েছেন। একই সঙ্গে ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে এরকম কঠোর ব্যবস্থার ঘটনা ছাত্রলীগের ইতিহাসেই প্রথম। ছাত্রলীগ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। তাদের নেতৃত্বে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠানের জোর তৎপরতা চলছে।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2019