এস. এম. সাইফুল ইসলাম কবির, সুন্দরবন থেকে ফিরে:বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের উপকূলে অবস্থিত বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা ও সাতক্ষীরা উপকূলে মে মাস এলেই বাড়ে আতঙ্ক। ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আয়লার পর থেকে প্রতি বছরই এই মাসে একাধিক ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে বাংলাদেশ উপকূলে। এবছরও তার ব্যতিক্রম নয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, চলতি মে মাসের শেষার্ধে একটি নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। তবে শুধু ঝড় নয়, এই অঞ্চলের মানুষের সবচেয়ে বড় শঙ্কার নাম নদ-নদীর দুর্বল বেড়িবাঁধ। ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রা কম হলেও জোয়ারের চাপে এসব বাঁধ ভেঙে পড়ে, আর তাতেই তলিয়ে যায় লোকালয়, ফসলি জমি ও মানুষের জীবনের স্বপ্ন।
প্রতি বছর মে মাসে একাধিক ঘূর্ণিঝড়
২০২৪: ২৬ মে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় রেমাল
২০২৩: ১৪ মে আঘাত হানে মোখা, সাতক্ষীরায় ব্যাপক ক্ষতি
২০২১: ২৬ মে আঘাত হানে ইয়াস
২০২০: ২০ মে সুপার সাইক্লোন আম্ফান, প্রাণহানি ও বিশাল ক্ষতি
২০১৯: ২-৩ মে ফণী, ৯ জন নিহত
২০১৭: ৩০ মে মোরা, ১১০ কিমি গতির বাতাস
২০১৬: ২১ মে রোয়ানু, চট্টগ্রামে ২৪ জনের মৃত্যু
২০১৩: ১৬ মে মহাসেন, প্রাণ হারান ১৭ জন
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, অধিকাংশ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতির শিকার হয়েছেন সাতক্ষীরা ও খুলনা অঞ্চলের উপকূলবাসী।
ভাঙনের মুখে জীবন: স্থানীয়দের অভিজ্ঞতা
হরিণখোলা গ্রামের আব্দুর রহমান বলেন,
"প্রতিবছর মে মাসে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় আমাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। কপোতাক্ষ নদের বাঁধ বারবার ভেঙে গ্রামে পানি ঢোকে। আমার ১০ বিঘা জমি নদীতে চলে গেছে। এখন আবার সামনের বাঁধে ধস নেমেছে।"
রহিমা বেগম বলেন,
"নদীভাঙনে সব জমি হারিয়েছি। এখন বস্তিতে থাকি, মানুষের সাহায্যে চলি। দুর্যোগ এলেই মনে হয় আর কিছুই থাকবে না।"
ইমরান হোসেন (ঘাটাখালি):
"ভিটেমাটি নদীতে গেছে। দুর্যোগ এলেই পরিবার নিয়ে কোথায় যাব বুঝতে পারি না।"
বিনয় সরকার (বালিয়াডাঙ্গা):
"মে মাস আসলেই খবরে চোখ রাখি—আবার দুর্যোগ আসছে কিনা।"
জরিনা খাতুন (নদের চর):
"ঝড় আসলেই ঘর ভেঙে যায়, পরে কষ্ট করে আবার গড়ি।"
মো. সিদ্দিকুর রহমান (মহেশ্বরীপুর):
"বাঁধটা ঠিক থাকলে অন্তত রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম। এখন সব সময় ভয়ে থাকি।"
️ প্রশাসনের দাবি: ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধে কাজ চলছে
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (সাতক্ষীরা-১) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন জানান,
"ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো চিহ্নিত করে টেন্ডার করে কাজ দেওয়া হয়েছে। নিচু ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা মনিটরিংয়ে রয়েছে। নতুন সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
**
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ বেল্লাল তালুকদার
প্রধান কার্যালয় ফ্লাট#এ ৫ ট্রফিকাল হোম ৫৫/৫৬ শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন রোড মগবাজার রমনা ঢাকা-১২১৭
মোবাইল নং- 01712573978
ই-মেইল:- ajkercrimenews@gmail.com
Copyright © 2025 আজকের ক্রাইম নিউজ. All rights reserved.