২২ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২১ অপরাহ্ন, ২৩শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, মঙ্গলবার, ৯ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মোহাম্মদ হাফিজ উল্যাহ ভোলা জেলা প্রতিনিধ ::
ভোলার দৌলতখানে মহিউস সূন্নাহ আকবারুল উলুম ( সেলিম চেয়ারম্যান বাড়ির দরজা) কাঠপট্টি মাদ্রাসার পরিচালক খোরশেদ আলমের অর্থ আত্মসাৎ, দূর্নীতি ও মাদ্রাসার তহবিল সমূহের অর্থ তছরুপ চলছে তার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে। তিনি প্রায় ১০ বছর যাবৎ মাদ্রাসা পরিচালকের দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। সভাপতি মাইনুল হক ও পরিচালক খোরশেদ আলম তাদের অর্থ আত্মসাৎ/দূর্নীতি আড়াল করতে হয়ে ওঠেন স্বেচ্ছাচারী এবং অত্যাচারী। তাদের জুলুম, অত্যাচার ও স্বেচ্ছাচারিতায় অতিষ্ঠ হয়ে ইতিপূর্বে কয়েকজন শিক্ষক মাদ্রাসা থেকে চাকুরী ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। মাওঃ খোরশেদ আলমের দূর্নীতি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেনি মুখ খুলেছে তার উপর বিভিন্ন অপবাদ ও অভিযোগ দিয়ে বিদায় নিতে বাধ্য করেছেন তিনি। খোরশেদ আলমের এই দোর্দন্ড দাপটের পিছনে রয়েছে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাইনুল হকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে, অন্যান্যরা তার শ্বশুরালয়ের আত্মীয় স্বজন এবং মজলিশে সূরা কমিটির সভাপতি তার আপন বড় ভাই আব্দুল মালেক মাওলানার আশ্রয়-প্রশ্রয়। পরিচালক খোরশেদ আলম চাতুরতার সাথে হীন উদ্দেশ্যে শিক্ষকদের মধ্যে আবাসিক-অনাবাসিক বৈষম্য ও বিভাজন তৈরি করতে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে কতিপয় শিক্ষককে ব্যবহার করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর একটি ঘটনা এরকম যে, তিনি ১ জন শিক্ষককে তার সমর্থনে অথবা চুপ রাখতে প্রতিষ্ঠানের কানুন ভঙ্গ করে অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে মাদ্রাসার বাহিরে সমঝোতা বৈঠক করেছেন। মাওঃ খোরশেদ আলম তার আধিপত্য ফিরে পেতে তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া শিক্ষকদের শায়েস্তা করতে হাফিজ উল্যাহ মাষ্টার কে প্রধান লক্ষবস্তুতে এনেছেন। ঈদুল ফিতরের বন্ধের পর ২০/০৪/২৪ ইং মাদ্রাসা খোলা তারিখে ভর্তি কার্যক্রম সম্বন্ধে খোরশেদ আলম শিক্ষকদের সভা ডাকেন, উক্ত সভায় ১ জন শিক্ষক উপস্থিত হতে দেড়ি করায় উত্তেজিত হয়ে অসৌজন্যমূলক কথাবার্তা বলেন। এই সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যার যার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। খোরশেদ আলম ২৩/০৪/২৪ ইং শিক্ষকদের সাধারণ সভায় হাফিজ উল্যাহ মাষ্টার কে আব্দুল হাই মাষ্টারের ৫ম শ্রেণির অংকে বেফাক বোর্ড পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করা ৫ জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়ার জন্য দায়ি করে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও দম্ভোক্তিপুর্ণ অঙ্গভঙ্গি করেন। আব্দুল হাই মাষ্টার পালিয়ে যাওয়ার পর হাফিজ উল্যাহ মাষ্টার এর কাছে ৫ ম শ্রেণির ইতিহাস/ভূগোল থাকার পরও মাদ্রাসায় আর কোন শিক্ষক না থাকায় আপদকালীন সময় বিবেচনায় অংক বিষয়টি যতটুকু সম্ভব তাকে দেখার জন্য শিক্ষা সচিব অনুরোধ করেন। হাফিজ উল্যাহ মাষ্টার বোর্ড পরিক্ষার অল্প কয়েকদিন পূর্বে এরকম অনুরোধে অপারগতা প্রকাশ সত্যেও শিক্ষা সচিব আল্লাহর দিকে তাকিয়ে মাদ্রাসার স্বার্থে যতটুকু সম্ভব দেখতে বার বার অনুরোধ করেন। একই সভায় গত বছরের ম্যানেজিং কমিটির সভায় খোরশেদ আলম হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে ব্যক্তিগত কাজে মাদ্রাসায় ছিলেন না প্রমাণ করায় পূর্বের মীমাংসিত বিষয় নিয়ে হটাৎ উত্তেজিত হয়ে চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন শিক্ষা সচিবের সাথে। তারপর দিন খোরশেদ আলম খোলা তারিখে সভায় উপস্থিত হতে দেড়ি করা শিক্ষকের সাথে মাদ্রাসার পথিমধ্যে উচ্চস্বরে বলেন, প্রত্যেকের রেকর্ড আছে এইবার দেখাইয়া দিমু ত্যাজস্ক্রীয় ভাষা ব্যবহার করে। ঘোলাটে পরিস্থিতিতে ২৭/০৪/২৪ ইং শিক্ষকদের সাধারণ সভায় হাফিজ উল্যাহ মাষ্টার এর বিরুদ্ধে ২০১৯ ইং সনে করা একটি গোপন রেজ্যুলিউশন পড়ে শোনান, যাতে ২ টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এবং উক্ত সভায় হাফিজ উল্যাহ মাষ্টার কে অন্যত্র চাকুরী দেখতে মৌখিকভাবে বলেন ও কারো কোন কথা থাকলে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাইনুল হক এর সাথে বলার সিদ্ধান্ত শোনায়। সভাপতি মাইনুল হক ও পরিচালক খোরশেদ আলম ২৭/০৪/২৪ ইং তারিখের পূর্বে হাফিজ উল্যাহ মাষ্টার এর বিরুদ্ধে করা ২০১৯ ইং সনের রেজ্যুলিউশন সম্বন্ধে ইতিপূর্বে তাকে কোনরুপ অবহিত করেননি অথবা শিক্ষকদের সাধারণ সভায় কখনও উত্থাপন করেননি। এরপর ২৮/০৪/২৪ ইং সভাপতি মাইনুল হকের সাথে হাফিজ উল্যাহ মাষ্টার সাক্ষাৎ করলে তিনি সভা ডেকে সকলের পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন বলে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু ২৯/০৪/২৪ ইং হাফিজ উল্যাহ মাষ্টার মাদ্রাসায় যাওয়ার পর সভাপতি তার ব্যক্তিগত মুঠোফোন থেকে মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। হাফিজ উল্যাহ মাষ্টার প্রতিউত্তরে তার কাছে লিখিত নোটিশ চান। পরদিন ৩০/০৪/২৪ ইং হাফিজ উল্যাহ মাষ্টার মাদ্রাসায় যাওয়ার পর সভাপতি তার মুঠোফোন থেকে তাকে উত্তেজিত স্বরে মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে যেতে বিভিন্ন হুমকি – ধমকি দেন, প্রতিউত্তরে হাফিজ উল্যাহ মাষ্টার লিখিত নোটিশ অথবা অব্যাহতির কাগজপ্ত্র চান, অন্যথায় তিনি মাদ্রাসা ছেড়ে যাবেন না সভাপতিকে বলেন। একপর্যায়ে সভাপতি তার স’মিলের শ্রমিক সঙ্গে নিয়ে মাদ্রাসার ভিতর থেকে হাফিজ উল্যাহ মাষ্টার কে জোড়পূর্বক টেনে-হেচরে বের করে বাজারের সদর রাস্তায় উঠিয়ে দেয়। সভাপতি মাইনুল হক কর্তৃক সৃষ্ট এরকম নিন্দনীয় ঘটনায় মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক এবং এলাকায় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মাঝে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। এ ঘটনার পর হাফিজ উল্যাহ মাষ্টার ৩০/০৪/২৪ ইং মজলিসে সূরার সভাপতি ও চরশুভী মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আব্দুল মালেক এবং ইত্তেহাদুল ওলামাইল মাদারিছিল ক্বাওমিয়া ভোলা এর দৌলতখান উপজেলা কর্তৃপক্ষ এর নিকট মৌখিক অভিযোগ করেন, এবং ০২/০৫/২৪ ইং ইত্তেহাদ বোর্ড কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। মাইনুল হক, খোরশেদ আলম টের পেয়ে সূরা কমিটির সভাপতি আব্দুল মালেক সহায়তায় অত্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবে পূর্বের ৩ জন সদস্যের সাথে ৭ জন বর্ধিত করে অনুগত-বাধ্যগতদের নিয়ে নতুন মজলিসে সূরা কমিটি গঠন করেন, উক্ত কমিটি দ্রুতবেগে ০৩/০৫/২৪ ইং একটি সভা আহবান করেন। উক্ত সভার বিষয়বস্তুসমূহ শিক্ষকদেরকে লিখিত অথবা মৌখিকভাবে অবহিত না করে তাদের ফরমায়েশি খসড়া থেকে সভা শুরুর কিছুক্ষণ আগে নির্ধারিত করা হয়েছে। উক্ত সভার বিষয়বস্তু ছিল প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও সভাপতি নিজেদের সকল অপকর্ম থেকে দায়মুক্তির আয়োজন এবং ৬/৭ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগে শায়েস্তা করার পূর্ব পরিকল্পনার অংশ। বিকেল প্রায় ৪ ঘটিকায় শুরু হওয়া সভার শেষে লগ্নে হাফিজ উল্যাহ মাষ্টার এর বিরুদ্ধে ২০১৯ ইং সনের রেজ্যুলিউশন ( ২৭/০৪/২৪ ইং প্রথম প্রকাশিত ) বিষয় উত্থাপন করা হয়। সভায় লিখিত বিষয়বস্তু থেকে প্রতিষ্ঠান প্রধান কে জুতা পেটা করতে চাওয়া ও তার কক্ষে তালা মারার বিষয় আনা না হলেও খোরশেদ আলম তার বক্তব্যে হাফিজ উল্যাহ মাষ্টার এর বিরুদ্ধে এ ঘটনা সহ বিভিন্ন মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ তোলেন। তবে প্রধানের সাথে যেই শিক্ষকের সাথে ওই ঘটনা ঘটেছে তিনি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি দেন। হাফিজ উল্যাহ মাষ্টার এর কথা বলার সময় আসলে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা-বানোয়াট অভিযোগগুলোর পরিপূর্ণ জবাব দিতে দেওয়া হয়নি। ব্যাক ডেটের রেজ্যুলিউশন সম্বন্ধে জবাব না নিয়ে ও কোন আলোচনা – পর্যালোচনা ছাড়া-ই ১৫/২০ মিনিটের মধ্যে ফরমায়েশি ও তাদের পূর্ব চক্রান্তনুযায়ী এক পাক্ষিক ২০১৯ ইং সনের রেজ্যুলিউশনের অভিযোগের ভিত্তিতে হাফিজ উল্যাহ মাষ্টারের উপর জুলুমী অব্যাহতির সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়। হাফিজ উল্যাহ মাষ্টার এরকম ঘটনায় দিশেহারা ও হতবাক হয়ে পড়েন, এবং তিনি ০৫/০৫/২৪ ইং ইত্তেহাদ বোর্ড কর্তৃপক্ষ বরাবর আরেকটি লিখিত অভিযোগ দেন। ইত্তেহাদ বোর্ড কর্তৃপক্ষ ৫ সদস্যের একটি টিম ১৫/০৫/২৪ ইং মাদ্রাসায় এসে সভাপতি মাইনুল হকের সাথে কথা বললে তিনি তাদেরকে নিয়ে সময় নির্ধারণ করে বসে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। প্রায় ১ মাস সময় নিয়ে কালক্ষেপণ করে তিনি ০১/০৬/২৪ ইং ইত্তেহাদ বোর্ড কর্তৃপক্ষকে ০৩/০৫/২৪ ইং এর সিদ্ধান্তে অনড় অবস্থানের কথা জানায়। এ বিষয়ে ইত্তেহাদ বোর্ড কর্তৃপক্ষ হাফিজ উল্যাহ মাষ্টার কে ডেকে নিয়ে অবহিত করেন।এ বিষয়ে মাদ্রাসার পরিচালক এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ গুলো এককথায় কৌশলে এড়িয়ে যান।।