১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৭ অপরাহ্ন, ১১ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, শনিবার, ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজকের ক্রাইম ডেক্স
বৈসাবির রঙ লেগেছে পাহাড়ে। ঐতিহ্যবাহী গান আর নৃত্যে আনন্দ ও খুশিতে মাতোয়ারা পাহাড়ি তরুণ-তরুণীরা।
ভোরের আকাশে রক্তিম সূর্যের আলো ফুটতেই পাহাড়ি জেলা রাঙ্গামাটির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর স্ব-স্ব জাতির শিশু-কিশোর এবং তরুণ-তরুণীরা তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও অলংকার পরিধান করে, মাথায় চুলের কোপায় রঙ-বেরঙের ফুল গুজে দিয়ে হাতে কলা পাতা, হলুদ গাঁদা, রক্তজবা, মধু মালতী এবং নয়নতারা ফুল নিয়ে হাজির হলেন কাপ্তাই হ্রদের তীরে। পরে সবাই এক সঙ্গে মঙ্গল কামনায় নতুন বছরকে বরণ ও পুরোনো বছরকে বিদায় জানাতে রঙ-বেরঙের এই ফুলগুলো কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা।
চাকমা রীতিতে এই ফুল ভাসানোর নাম হলো ‘ফুল বিজু’, ত্রিপুরা বলে‘হারি বৈসুক’, মারমারা বলে ‘পাইনছোঁয়াং’ এবং তঞ্চঙ্গ্যারা বলে ‘বিসু’। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জাতির এটিই জীবনের বছরের প্রধান সামাজিক উৎসব।
নিজেদের মঙ্গল কামনায় বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু ও সাংক্রান উদযাপন কমিটির উদ্যোগে রাজবন বিহারের পূর্বঘাটে (রাজবাড়ি ঘাটে) কাপ্তাইয়ের জলে ভাসিয়ে দিলেন ফুল। এ সময় শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীদের সঙ্গীয় হয়ে হ্রদের পানিতে ফুল ভাসান, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু ও সাংক্রান উদযাপন কমিটি আহবায়ক প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, সাধারণ সম্পাদক ইন্টুমনি চাকমা, বিশিষ্ট নারীনেত্রী ও সদস্য পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিটি শ্রীমতি জ্যোতি প্রভা লারমা প্রমুখ।
অপরদিকে, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শহরের গর্জনতলী এলাকায় ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে কাপ্তাই হ্রদের জলে ফুল ভাসানো হয়। এ সময় ও তরুণ-তরুণীদের সঙ্গী হয়ে পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি।
এ সময় রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী, জেলা পরিষদের সদস্য বিপুল ত্রিপুরা, ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিদ্যুৎ ত্রিপুরা সহ নর-নারীরা হ্রদে ফুল ভাসিয়ে বৈসাবির মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। এছাড়াও পলওয়েল পার্কসহ বিভিন্ন স্থানে কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর স্ব-স্ব জাতিরা।
ফুল ভাসানোর পরপরই শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীরা নিজেদের ঘরে ফিরে যায়। বড়দের আশীর্বাদ গ্রহণ করে। শেষে বয়স্কদের স্নান করানো হয়। এছাড়াও পাড়ার বয়স্কদের শরীরে পানি ঢেলে তাদের আশীর্বাদ কামনা করেন তারা। দেওয়া হয় নতুন পোশাক।
তাদের বিশ্বাস মতে, পুরোনো বছরের সব ময়লা, পাপ, আপদ, বিপদ, গ্লানি, ব্যর্থতা ধুয়ে-মুছে ফেলতে পানিতে ভাসানো হয় ফুল। এর মধ্য দিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা জানানো হয়। নতুন বছরে সবক্ষেত্রে পরিপূর্ণরূপে সাফল্য অর্জন ও শুভ-মঙ্গলের বয়ে আসবে বলে মনে করেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর স্ব-স্ব জাতিরা।
শুক্রবার ১২ এপ্রিল পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে তিন দিনের সার্বজনীন উৎসব শুরু হয়। কাল উদযাপিত হবে মূল বিজু। ১৪ এপ্রিল অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে গোজ্যাপোজ্যে (গড়াগড়ি) দিন ও বর্ষবরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। ১৬ এপ্রিল মারমা জনগোষ্ঠীর ‘সাংগ্রাই’ উৎসবের জলকেলি’র মধ্য দিয়ে পাহাড়ে শেষ হবে এবারের বৈসাবি।