১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৩ অপরাহ্ন, ১১ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, শনিবার, ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শহীদুল ইসলাম শহীদ, (গাইবান্ধা)প্রতিনিধিঃ
গাইবান্ধার সুুন্দরগঞ্জ উপজেলায় সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেড়েছে। কিশোর অপরাধীরা বড় ভাইদের আস্কারায় গ্যাং বা গ্রুপ সৃষ্টি করে বিভিন্ন অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। জড়িয়ে পড়ছে মাদক, জুয়া, চুরি, ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গ্রাম ও পৌর শহরের বিভিন্ন গলিতে এই কিশোররা সমাজের মধ্যে নিজেদের মতো করে নতুন এক সমাজ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। তারা নিজেদের প্রভাব বিস্তার করার জন্য দেশিও অস্ত্র হাতে নিয়ে বিভিন্ন স্টাইলে ছবি তুলে তাদের নিজের ফেসবুক আইডিতে পোষ্ট করছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কিশোর অপরাধীরা আবার বিভিন্ন গ্যাং এর মাধ্যমে তথাকথিত বড় ভাইদের আস্কারা পেয়ে অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন এ অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার পরও কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধীদের কোনো ভাবেই থামানো যাচ্ছে না। দিন দিন তাদের উৎপাত বেড়েই যাচ্ছে। কিশোর গ্যাংয়ের কবল থেকে রক্ষা পেতে উপজেলা প্রশাসন এর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন অভিভাবক মহল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তারাপুর ইউনিয়নের হাট বাজার বিভিন্ন চা-দোকানের ভেতর কিশোরদের আড্ডাবাজি চলছে। রাস্তার সঙ্গে ওই দোকানগুলো হওয়ায় চলাচলরত স্কুলছাত্রীদের ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে। এছাড়া পাড়া মহল্লার রাস্তায় তাদের দলবদ্ধভাবে আড্ডা দিতেে দেখা যাচ্ছে । এমন কি বিভিন্ন সময় অভিভাবকদেরও তারা নানা ধরনের হুমকি দিয়ে আসছে। তাদের উৎপাতের ভয়ে কেউ কারও কাছে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। শুধু তারাপুর নয়, এমন চিত্র দেখা গেছে, পৌরশহরের মীরগঞ্জ পাটনিপাড়ার সামনে, গুচ্ছ গ্রাম, দোলাপাড়া, তিস্তা বাজার, হাসপাতালের সামনে, এছাড়া বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের সাতগিরি গ্রাম, বামনডাঙ্গা বন্দর, সোনারায় ইউনিয়নের ছাইতানতোলা বাজার, সোনারায় বাজার, বেলকা ইউনিয়নের চাঁন্দের মোড়, বেলকা বাজার, শান্তিরাম ইউনিয়নের কালিতোলা বাজার, শোভাগঞ্জ বাজার, শ্রীপুর ইউনিয়নের মজুমদার হাট, বোয়ালী বাজার গ্রামের বিভিন্ন মোড় এলাকাসহ উপজেলা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে তাদের দলবদ্ধভাবে আড্ডা দিতে দেখা যায়।
পৌরসভা, বামনডাঙ্গা, সোনারায় ও তারাপুর এলাকার কয়েকজন অভিভাবক বলেন, প্রায় সময়ই কিছু কিশোর ছেলে পেলে এলাকার বিভিন্ন চা-দোকানের সামনে জোটবদ্ধ হয়ে বসে থাকে। যখনই কোনো স্কুলছাত্রী বা মেয়ে আসে তখনই তারা নানা ধরনের অশ্লীল বাক্য উচ্চারণ করতে থাকে এবং ওই ছাত্রীদের উদ্দেশ্য করে ইভটিজিং করতে থাকে। অপমানিত হওয়ার ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না। প্রশাসন এ অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার পরও কিশোর গ্যাং এর অপরাধীদের কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। এছাড়া তারা ছাগল চুরি ও দোকান চুরি, জমি দখল, ঘর দখল, মোবাইল ছিনতাই, বিভিন্ন জনের কাছে চাঁদা আদায়সহ হেন অপরাধ যা তারা করছে না।
তারা আরও জানান, মাদকের ছড়াছড়ি আর সন্ত্রাসের উপাদানগুলো হাতের কাছে পাওয়ায় কিশোর অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। দ্বিধা করছে না কোন অপরাধ করতে। তথাকথিত বড় ভাইদের সহযোগিতা পেয়ে তারা দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। কে কোনো সময় খুন, গুম কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হবে তা বলার কোনো উপায় নেই। সাধারণ মানুষের অসহায় এ অবস্থা থেকে মুক্তি না মিললে সমাজে বাস করাও দায় হবে। এ সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর অপরাধীরা। মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হলেও কিশোর অপরাধীদের গ্যাং কালচার বন্ধ করা যাচ্ছে না। প্রতিটি গ্যাংয়ের নেপথ্যেই স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মদদ রয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় এ সকল অপরাধীরা। রাজনৈতিক নেতাদের উচিত হবে না কোনো অপরাধীকে প্রশ্রয় দেওয়া। তাদের উচিত শিশু-কিশোরদের অপরাধ থেকে মুক্ত রাখার জন্য কর্মসূচি তৈরি করা। পাশাপাশি সমাজের সচেতন ব্যক্তিবর্গকেও এগিয়ে আসতে হবে। সাধারণ মানুষের অসহায় এ অবস্থা থেকে মুক্তি না মিললে সমাজে বাস করাও দায় হবে। এ সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।