০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১৪ পূর্বাহ্ন, ৩০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, মঙ্গলবার, ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মাহতাব উদ্দিন আল মাহমুদ(মহাতাব মুহাম্মাদ সরকার )ঘোড়াঘাট(দিনাজপুর)প্রতিনিধিঃ
কখনও পুলিশের জেলা বিশেষ শাখার (ডিএসবি) সদস্য, কখনও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও এমপি-মন্ত্রীর সাথে সুসম্পর্ক এমন নানাবিধ পরিচয়ে চাকরি নিয়ে দেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া এক প্রতারকের সন্ধান পেয়েছে । এক যুবককে পুলিশে চাকরি নিয়ে নেওয়ার কথা বলে তার পরিবারের কাছে থেকে নিয়েছেন ১ লাখ টাকা। বিনিময়ে দিয়েছেন ভূয়া সুপারিশপত্র এবং অন্যের নামে থাকা ইসলামী ব্যাংকের চেক।
শুধু চাকরি নিয়ে দেওয়া নয়। পুলিশ পরিচয়ে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি করেন এই প্রতারক। বিচারকের সাথে ভালো সম্পর্ক আছে এমন চমৎকার গল্পে বিভিন্ন মামলার আসামীদের জামিন করিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের পরিবারের কাছ থেকে নেন লাখ টাকা পর্যন্ত।
এমন বহুরূপী প্রতারক হলেন শামীম মিয়া। দীর্ঘদিন যাবত তিনি থাকেন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায়। পৌর এলাকার নয়াপাড়া গ্রামের মোকছেদ আলীর মেয়েকে বিয়ে করে সেখানেই ঘর জামাই থাকেন প্রতারক শামীম। তার নিজ গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার সিধনগ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আব্দুল গফুরের ছেলে।
গত বছর ঘোড়াঘাট পৌর এলাকার এসকে বাজার গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে ওমর ফারুক ফয়সালকে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি নিয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রথম দফায় ১ লাখ টাকা নেন শামীম। কিছুদিন পর চাকরি প্রার্থী ফয়সালের পরিবারকে পুলিশ সদর দপ্তরের প্যাডে একটি সুপারিশপত্র ধরিয়ে দেন প্রতারক শামীম। সেই সুপারিশ পত্রে অতিরিক্ত আইজিপি কামরুল আহসান বিপিএম (বার) এর স্বাক্ষর করা আছে। সুপারিশপত্রের উপরে পুলিশ সদর দপ্তরের আইসিটি শাখার একটি সিল যুক্ত করা হয়েছে।
তবে টাকা দেওয়া এবং সুপারিশপত্র পাওয়ার এক বছর অতিবাহিত হলেও ছেলের চাকরি না হওয়ায় হতাশায় পড়েন ফয়সালের পরিবার। এরপর জানতে পারেন শামীম একজন প্রতারক। একই ভাবে আনসার বাহিনীতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ঘোড়াঘাট পৌরসভার কালিতলা গ্রামের শফিউল ইসলামের কাছ থেকে নেন ৫০ হাজার টাকা। শফিউল তার ছেলের চাকরির জন্য সেই টাকা দিয়ে ছিলেন। প্রতারক শামীম সেই একই ভাবে একটি ভূয়া সুপারিশপত্র ধরিয়ে দেন শফিকুলের হাতে। তবে শেষ পর্যন্ত আনসার বাহিনীতে তার ছেলের চাকরি হয়নি।
শুধু চাকরির নামে প্রতারণা নয়। নিজেকে দিনাজপুর জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) সদস্য পরিচয় দিয়ে ঘোড়াঘাট উপজেলার বালুমহাল, ইটভাটা ও বিনোদন পার্ক সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদা দাবি করে বেড়ান প্রতারক শামীম। যা খোদ পুলিশ সদস্যের হাতে ধরা পড়ে। তবে মৌখিক ভাবে মাফ চেয়ে সেবারের মত পার পেয়ে যান প্রতারক শামীম।
বেকার প্রতারক শামীম দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট এবং গাইবান্ধার পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জ থানা চত্বরে ঘুরে প্রথমে টার্গেট করেন। এরপর বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার থাকা আসামীর জামিন করিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের পরিবারের কাছে থেকে দফায় দফায় টাকা নিতে থাকেন শামীম।
ছেলের চাকরির জন্য টাকা দেওয়া ভূক্তভোগী সিরাজুল ইসলাম রাজু বলেন, আমাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়েও কথা বলে ভূয়া কাগজ দিয়েছে শামীম।। এক বছর্ অ্তিবিহিত হচ্ছে আমার টাকা ফেরত দেয়নি।
ঘোড়াঘাট-হাকিমপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শরিফুল ইসলাম বলেন, ঘটনা শুনেছি। তদন্তপূর্বক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য আমরা কাজ করছি। পুলিশ বাহিনী বা অন্য কোন সরকারী বাহিনীতে চাকুরিতে কোন ধরণের টাকা লেন দেনের সুযোগ নেই। কেউৃ প্রতারণা করলে কঠোর আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। ভূয়া সুপারিশপত্রটি আমরা পেয়েছি। এটি সম্পূর্ণ, ভূয়া।