শফিকুল ইসলাম দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি: ৫০ শয্যা বিশিষ্ট দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালালদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে।
এতে সাধারণ রোগীদের বাইরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসা করাতে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ হচ্ছে। এ ছাড়া দালালদের কারণে রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
স্থানীয় বেশকয়েকটি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকেরা হাসপাতালে দালাল চক্র গড়ে তুলেছেন।
এক সপ্তাহ যাবত বিরামপুর সরকারি হাসপাতাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুই পাশের প্রবেশ পথ, জরুরি বিভাগ, আউটডোরসহ হাসপাতালের বিভিন্ন অংশে ঘোরাঘুরি করছে দালালরা।
বিভিন্ন অংশে জটলা পাকিয়ে আছেন বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিপণন প্রতিনিধিরা। জরুরি বিভাগসহ হাসপাতালের বেশকটি ইউনিটের সামনেই তাদের অবস্থান। রোগীরা চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হওয়া মাত্র ওষুধ কোম্পানির লোকজন প্রেসক্রিপশন নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু করেন। রোগীর অনুমতি না নিয়েই সমানে প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলতে থাকেন তারা। এতে রোগী ও তাদের স্বজনরা সংকোচ বা বিব্রত বোধ করলেও যেন তাদের কিছুই আসে যায় না।
হাসপাতালের আউটডোরে যেসব চিকিৎসক রোগী দেখেন, তাদের কক্ষের সামনেও থাকে দালালদের উপস্থিতি। কোন রোগী চিকিৎসাসেবার জন্য ডাক্তার দেখাতে আসলেই পড়ে যান দালালদের খপ্পরে। তারা রোগীর সাথে ছলে-বলে কৌশলে নানা আলাপচারিতায় সখ্যতা গড়ে তোলেন। তারপর চিকিৎসক যদি রোগ নির্ণয়নের জন্য পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন, তখন তারা রোগীকে তাদের পছন্দমত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যান। বিনিময়ে তারা পেয়ে যান বিভিন্ন অংকের কমিশন।
এদিকে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট বিরামপুর সরকারি হাসপাতালে ইতিপূর্বে ভর্তি রোগীদের রাউন্ড ডিউটিভেদে সকল চিকিৎসক দিয়ে থাকলেও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাহাজুল ইসলাম কমিশনের আশায় মহিলা ও পুরুষ ওয়ার্ডে প্রতিদিন একাই রাউন্ড দেন।
তিনি ব্যবস্থাপত্রে পরীক্ষা–নিরীক্ষা লিখে দেওয়ার পর তার পছন্দসই ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন রোগীর স্বজনদের। আর এসব কাজে সহযোগীতা করেন রিপন ও তারেক নামের দুজন দালাল।
হাসপাতালে ভর্তি রোগীর স্বজনদের নিকট জানতে চাইলে তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, একজন ডাক্তার দুটি ওয়ার্ডে দীর্ঘসময় ধরে রাউন্ড দেওয়াতে টেস্টের স্লিপ মেলে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে একটা নাগাদ। প্যাথলজি বিভাগে টেস্টের স্লিপ নিয়ে গেলে তারা বলেন আমাদের ২টায় অফিস বন্ধ হবে, এখন রক্ত নিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে কিভাবে রিপোর্ট দিব। আবার রিপোর্ট পেলেও সময় শেষ হওয়াতে হাসপাতালের আউটডোর বন্ধ হওয়ায় আর ডাক্তার মেলেনা।
এতে করে রোগীকে বাহিরে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিতে হয়। আমরা গরীব মানুষ বাহিরে গেলে অনেক টাকা খরচা হয়। যা আমাদের সাধ্যের বাহিরে।
এসব বিষয়ে জানতে আরএমও ডা. তাহাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনে প্রতিবেদককে বলেন, আমি হাসপাতালের আরএমও পদে আর নেই। অভিযোগগুলো সত্য নয়। এ ব্যাপারে আপনি স্যারের (স্বাস্থ্য ও প: প: কর্মকর্তা) সাথে কথা বলেন।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প: প: কর্মকর্তা ডা: আব্দুল্লাহ আল ইফরান বলেন, লোকবল সংকটের কারনে দালাল ও ওষুধ কোম্পানির বিপণন প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না, তবে আপনাদের (সাংবাদিকের) চোখে পড়লে আমার নিকট ধরে আনলে ব্যবস্থা নিব। হাসপাতালের দুটি ওয়ার্ডে ডা: তাহাজুল ইসলাম প্রতিদিন একাই রাউন্ড দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন এটা আরএমওর কাজ। দালালদের প্রশয় দেবার বিষয়ে তিনি বলেন রোগীরা সু-নিদিষ্ট অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ বেল্লাল তালুকদার
প্রধান কার্যালয় ফ্লাট#এ ৫ ট্রফিকাল হোম ৫৫/৫৬ শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন রোড মগবাজার রমনা ঢাকা-১২১৭
মোবাইল নং- 01712573978
ই-মেইল:- ajkercrimenews@gmail.com
Copyright © 2025 আজকের ক্রাইম নিউজ. All rights reserved.