অনলাইন ডেস্ক
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে বিএনপি অনুষ্ঠানিকভাবে অংশ না নেওয়ায় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিদ্রোহীরা। দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও মনোনয়ন না পাওয়ায় তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। বিদ্রোহীদের তৎপরতায় দুশ্চিন্তায় আছেন ঊর্ধ্বতন নেতারা। তারা যে কোনো মূল্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বিজয় দেখতে চান। এতে দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা অনেকটা মরিয়া হয়েই নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন। লাঠিসোটা নিয়ে মিছিল, বিদ্রোহীদের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর, প্রতিদ্বন্দ্বী কর্মীদের ওপর হামলা, পোস্টার ছেঁড়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠছে তাদের বিরুদ্ধে। প্রতিকার চেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীরা বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগও দিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, ধনবাড়ীর সাত ইউনিয়নের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী। তারা হলেন- মুশুদ্দি ইউনিয়নের আবু কায়সার, বলিভদ্র ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম তালুকদার ও বীরতারা ইউনিয়নের আহমেদ আল-ফরিদ। এসব ইউনিয়নে বিদ্রোহীরা দলীয় চাপে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। বাকি চার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৮ জন। পাইস্কা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আবদুল মান্নান। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন- জাহাঙ্গীর আলম বাবুল (ঘোড়া), আর্শেদ আলী রাসু (চশমা), শফিকুল ইসলাম (মোটরসাইকেল) ও রইস উদ্দিন রাঙ্গা (আনারস)। এ ইউনিয়নে বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী আবদুল জলিল (হাতপাখা)।
যদুনাথপুরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মীর ফিরোজ আহমেদ। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন কামরুজ্জমান টিটু (টেবিল ফ্যান), খলিলুর রহমান (মোটরসাইকেল), রকিবুল হাসান তরফদার (আনারস), আমজাদ হোসেন (চশমা) ও আবদুল আজিজ (ঘোড়া)। এ ছাড়া ধোপাখালীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আকবর হোসেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন খোরশেদ আলম (ঘোড়া) ও উপজেলা বিএনপির সদস্য কামাল হোসেন তালুকদার মিন্টু (আনারস)। বানিয়াজানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন রফিকুল ইসলাম তালুকদার ফটিক। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ আলম তালুকদার (আনারস) ও খোকন মিয়া (ঘোড়া)। ধোপাখালী, পাইস্কা, যদুনাথপুর ও বানিয়াজানে প্রতিদিনই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। আশঙ্কা আছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষেরও। তবে প্রচারে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এগিয়ে থাকার কথা বলছেন এলাকাবাসী।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পরই প্রার্থীদের পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার ও লিফলেটে রঙিন হয়ে উঠেছে প্রায় সব রাস্তা, অলিগলি। হচ্ছে মোটরসাইকেল শোডাউন, মিটিং-মিছিল। তবে বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মীদের ওপর হামলা, প্রচারে বাধা, পোস্টার ছেঁড়াসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনায় ভোটারদের মধ্যে নির্বাচনী আমেজ ম্লান হচ্ছে, আগ্রহ হারাচ্ছে ভোট নিয়ে। এ ছাড়া সাত ইউনিয়নে ইউপি সদস্য পদে লড়ছেন পুরুষ ১৮৫ জন এবং সংরক্ষিত নারী ৬৫ জন। পাইস্কা ইউনিয়নের ভোটার আবদুর রহমান ও সোলাইমান কবির বলেন, 'ভোট দিতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে। কেন্দ্রে যাওয়ার আগেই হয়তো তাদের ভোট দেওয়া হয়ে যাবে।' ধোপাখালী ইউনিয়নে তরুণ ভোটার আল-আমিন ও জামাল শেখ বলেন, তারা যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতে চান।
অপ্রীতিকর ঘটনার বিষয়ে জানতে ধোপাখালীর আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আকবর হোসেকে পাওয়া যায়নি। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পাইস্কা ইউনিয়নের আবদুল মান্নান। যদুনাথপুরের মীর ফিরোজ আহমেদ বলেন, 'তার বিরুদ্ধে অনেকেই অপপ্রচার চালাচ্ছে।' বানিয়াজানের রফিকুল ইসলাম ফোন ধরেননি। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা করুণা সিন্দু চাকলাদার বলেন, 'অপ্রীতিকর ঘটনার বিষয়ে প্রার্থীদের অভিযোগ যাচাই-বাছাই হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে কাজ করছেন তারা।' ধনবাড়ী থানার ওসি চান মিয়া জানান, বিভিন্ন প্রার্থীর কিছু অভিযোগ আছে। এগুলো তদন্ত করা হচ্ছে। সত্যতা পেলে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হারুনার রশীদ হীরা বলেন, নির্বাচনে সহিংসতা, হুমকি-ধমকি সারাবিশ্বেই আছে। এটা নির্বাচনের অংশ। তবে সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানে সরকার ও নির্বাচন কমিশন যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করব।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ বেল্লাল তালুকদার
প্রধান কার্যালয় ফ্লাট#এ ৫ ট্রফিকাল হোম ৫৫/৫৬ শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন রোড মগবাজার রমনা ঢাকা-১২১৭
মোবাইল নং- 01712573978
ই-মেইল:- ajkercrimenews@gmail.com
Copyright © 2025 আজকের ক্রাইম নিউজ. All rights reserved.