অনলাইন ডেস্ক
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ইসলাম এবং মুসলমানবিরোধী কর্মকাণ্ডে মুসলিমবিশ্ব যখন তীব্র প্রতিবাদ এবং ফরাসি পণ্য বর্জনের জোর দাবি জানাচ্ছে, তখন ভারত ফ্রান্সের পক্ষ নিয়ে সামাজিকমাধ্যম টুইটারে প্রচারণা চালাচ্ছে।
‘হ্যাশট্যাগ আমি ফ্রান্সের পাশে আছি; এবং ‘হ্যাশট্যাগ আমরা ফ্রান্সের সাথে আছি’ শিরোনামে সোমবার এবং মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) ভারতের হাজারো টুইটার ব্যবহারকারী ফ্রান্সের প্রতি সংহতি জানিয়েছে।
ফ্রান্সের মুসলমানদের ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ এবং সারা বিশ্বে ‘ইসলাম ধর্ম সংকট তৈরি করছে’ মন্তব্য করে মুসলিমবিশ্বে ক্ষোভ ছড়িয়ে দেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
মহানবী মুহাম্মদ (স.) এবং ব্যঙ্গচিত্র শ্রেণিকক্ষে প্রদর্শনের পর খুন হন ফরাসি এক শিক্ষক। পরে ম্যাক্রোঁ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ফ্রান্সের সরকারি ভবনে ওই ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন শুরু হয়। ম্যাক্রোঁ জানান, তিনি ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন বন্ধে ব্যবস্থা নেবেন না। তার এমন দায়িত্বহীন বক্তব্যের পরই মুসলমানদের সে ক্ষোভ দ্রুতগতি সর্বত্র ছড়াতে থাকে।
ক্ষোভ এবং প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নামেন লাখ লাখ মুসলমান। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ তুরস্ক, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, সিরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা রাজপথের বিক্ষোভে অংশ নেন। ফরাসি পণ্য বয়কট, ফরাসি রাষ্ট্রদূত বহিষ্কারসহ নানা দাবিতে স্লোগান দেন তারা।
টুইট বার্তায় এক ভারতীয় বলেন, উগ্র ইসলামি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ফ্রান্স যা কিছু করছে তাতে আমি আনন্দিত। উগ্রবাদী মাজহাবি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ম্যাক্রোঁর লড়াইয়ে ভারতীয়দের সমর্থন দেয়া উচিৎ। ফ্রান্সের প্রশংসা করা উচিৎ। ভারত সবসময় ফ্রান্সের সঙ্গে আছে। ‘হ্যাশট্যাগ ওয়েলডান ফ্রান্স’, ‘হ্যাশট্যাগ আই স্ট্যান্ডউইথ ফ্রান্স।’
২০১৪ সালে হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় আসার পরই দেশটিতে মুসলমানবিরোধী মনোভাব ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। যার অনেক কিছুই ফরাসি প্রেসিডেন্টের চরিত্রের সঙ্গে মিলে যায়।
বিজেপি থেকে নির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্য পারভেশ শাহিব সিং এক টুইটে বলেন, সহনশীলতাও ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া উচিৎ। হ্যাশট্যাগ দিয়ে লেখেন, আমি ফ্রান্সের পাশে আছি। ভালো কাজ করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।
২০১৬ সালে ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধবিমান রাফায়েল কিনতে ৯শ’ ৪০ কোটি ডলারের বিতর্কিত চুক্তি করে ভারত। চলতি বছরের শুরুতে প্রথম চালানের ৫টি যুদ্ধবিমান ভারতে পৌঁছায়।
‘হ্যাশট্যাগ ওয়েলডান ম্যাক্রোঁ’র পাশপাশি ম্যাক্রোঁদ্যহিরো হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করছেন অনেক ভারতীয়।
ভারতে মুসলিমবিরোধী মনোভাব
মুসলিমবিরোধী নীতি গ্রহণে অভিযুক্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অতিসম্প্রতি বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন বিজেপি সরকারের সেই নীতিরই ফসল।
নাগরিকত্ব সংশোধীন আইনের (সিএএ) পক্ষে ভারত সরকারের দাবি, প্রতিবেশী পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা নতুন আইনে সুরক্ষা পাবে।
চলতি বছরের শুরুতে ভারতের বিভিন্ন শহরে সিএএবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভ মুসলমানদের লক্ষ্য করে হামলা চালায় ভারতের উগ্রহিন্দু এবং দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। এতে অর্ধশতাধিক মুসলমান নিহত হয়। আহত হয় অনেকে। বাস্তুচ্যুত হয় হাজার হাজার মানুষ।
দিল্লি সংঘাতের সূত্র ধরে বহু মুসলমানকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দেয়া হয়। তাদের আটক করে জেলে নেয়া হয়। দেয়া হয়নি জামিন।
গেলো সপ্তাহে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান মিশেল ব্যাশলেট সিএএসহ ভারতের তিনটি গুরুতর আইন তুলে ধরেন।
গরু জবাই করার সন্দেহে ২০১৪ সালে বহু মুসলমানকে হত্যা করে হিন্দু উগ্রবাদীরা। গরু হিন্দুদের কাছে পবিত্র বলে বিবেচিত। মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘটা সাম্প্রদায়িক অত্যাচারের বিচার নিশ্চিতে ধীরগতির কারণে ভারত সরকারের সমালোচনা করেছে অনেক মানবাধিকার সংস্থা।
সূত্র: আল জাজিরা
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ বেল্লাল তালুকদার
প্রধান কার্যালয় ফ্লাট#এ ৫ ট্রফিকাল হোম ৫৫/৫৬ শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন রোড মগবাজার রমনা ঢাকা-১২১৭
মোবাইল নং- 01712573978
ই-মেইল:- ajkercrimenews@gmail.com
Copyright © 2025 আজকের ক্রাইম নিউজ. All rights reserved.