ক্রাইম নিউজ ডেস্ক: বরিশালের রাঙ্গামাটি নদীর ওপর বহুপ্রতীক্ষিত গোমা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে খুশি ছড়িয়ে পড়ে। বরিশাল-লক্ষ্মীপাশা-দুমকি সড়কের এত দিনের দুর্ভোগ দূর হবে। তবে নির্মিতব্য সেতুটির উচ্চতা নদীর দুই পারের জনপদের বিপুলসংখ্যক মানুষের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা বলছে, প্রয়োজনের তুলনায় সেতুটি নিচু করে তৈরি করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। এতে নৌপথের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষও (বিআইডাব্লিউটিএ) বলছে, সেতুটির লেভেল বা উচ্চতা লঞ্চের চেয়ে কম হওয়ায় নৌপথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে।
৫৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে দুই কিলোমিটার রাস্তাসহ ২৮৩ দশমিক ১৮৮ মিটার দীর্ঘ এ সেতুর দুই-তৃতীয়াংশ কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। তবে সেতুর উচ্চতা নিয়ে বিআইডাব্লিটিএ এবং সওজের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে।
এলাকাবাসী বলছে, স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে হাট-বাজার, এমনকি বিভাগীয় শহর বরিশালে যাতায়াত করতে এই নদী পেরোতে হয়। সেতু না থাকায় তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। নদীতে স্রোত থাকায় ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার করতে হয় দুই পারের মানুষকে। তারা বলছে, সেতুর যেমন দরকার আছে, তেমনি নৌপথও সচল রাখতে হবে। কারণ নদীবেষ্টিত এই এলাকার জীবন-জীবিকার সঙ্গে নদীর যোগ চিরকালের।
উচ্চতা নিয়ে দ্বন্দ্বে দুই দপ্তর
বিধি অনুযায়ী, সওজ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর ২০১৫ সালের ৩ নভেম্বর বিআইডাব্লিউটিএর কাছে গোমা সেতুর উচ্চতা সম্পর্কে মতামত জানতে চেয়ে চিঠি পাঠায়। একই বছরের ১৫ ডিসেম্বর বিআইডাব্লিউটিএ এক চিঠিতে বর্ষা মৌসুমের পানির উচ্চতা থেকে কমপক্ষে ৭ দশমিক ৬২ মিটার উঁচুতে সেতু নির্মাণের পক্ষে মত দেয়। এরপর দরপত্রের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে নির্মাণকাজ শুরু হয়। তবে পরে বিআইডাব্লিউটিএ কাজ বন্ধের অনুরোধ জানায়। আগের পাঠানো অনাপত্তিপত্র ২০১৯ সালের ৮ মে পাঠানো এক চিঠিতে বাতিলও করে তারা। ওই চিঠিতে বলা হয়, নৌপথের গুরুত্ব ও পায়রাবন্দরের কার্যক্রম চালু হওয়ায় রাঙ্গামাটির ওই নৌপথকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে। এ নৌপথে বড় বড় নৌযান চলবে। এ কারণে বর্ষা মৌসুমে নদীর পানির উচ্চতা থেকে কমপক্ষে ১২ দশমিক ২০ মিটার উঁচুতে সেতু নির্মাণ করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পাওয়ার পর বরিশাল জোনের চলতি দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শিশির কান্তি রাউৎ গত ৩০ জুন এক চিঠিতে নকশা সংশোধনের ব্যাপারে প্রধান প্রকৌশলীকে জানিয়েছেন। জানতে চাইলে শিশির কান্তি রাউৎ কালের কণ্ঠকে বলেন, উচ্চতা বাড়ালে এরই মধ্যে শেষ হওয়া সেতুর ভিত্তিতে অতিরিক্ত চাপ পড়বে, যা নকশা প্রণয়নে বিবেচনা করা হয়নি। তা ছাড়া উচ্চতা বৃদ্ধির বিষয়টি কারিগরি ও বাস্তব দিক বিবেচনায় যৌক্তিক প্রতীয়মান হয় না। এ কারণে এই বিষয়ে বিআইডাব্লিউটিএর সম্মতিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে প্রধান প্রকৌশলীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিআইডাব্লিউটিএর নৌপথ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের দক্ষিণ বদ্বীপ অঞ্চলের যুগ্ম পরিচালক এস এম আজগর আলী বলেন, ‘নৌপথটি সচল রাখতে গোমা সেতুর উচ্চতা দ্বিতীয় শ্রেণিতে অর্থাৎ ১২ দশমিক ২০ মিটার করার প্রস্তাব দিয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সওজ কর্তৃপক্ষ পুরনো নকশা অনুযায়ী নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এভাবে সেতু নির্মাণ করা হলে গুরুত্বপূর্ণ এই নৌপথটি বন্ধ হয়ে যাবে।’
জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বলেন, পুরনো নকশা অনুযায়ী গোমা সেতু তৈরির কাজ চলছিল। ফলে নৌপথ বন্ধের উপক্রম হয়েছে। তাই কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আন্ত বিভাগীয় উন্নয়ন সভার সিদ্ধান্ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ বেল্লাল তালুকদার
প্রধান কার্যালয় ফ্লাট#এ ৫ ট্রফিকাল হোম ৫৫/৫৬ শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন রোড মগবাজার রমনা ঢাকা-১২১৭
মোবাইল নং- 01712573978
ই-মেইল:- ajkercrimenews@gmail.com
Copyright © 2025 আজকের ক্রাইম নিউজ. All rights reserved.