মোঃ আমিনুল ইসলাম/মোঃ আব্দুল কুদ্দুস::-
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় গম ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগ আক্রান্ত দেখা দিলে কৃষি বিভাগ মাইকিং করে চাষিদের গম আবাদ থেকে বিরত থাকতে আহ্বান করেছিলো। এলাকার গম চাষিরা কৃষি বিভাগের ডাকে সাড়া দিয়ে গম চাষ থেকে বিরতও ছিলো। দীর্ঘদিন গম আবাদ বন্ধ থাকার পর এবার চলতি গম আবাদ মরসুমে উপজেলা কৃষি বিভাগের নজরদারীতে গমের আবাদ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুন পরিমাণ গম আবাদ হয়েছে। চলতি গম আবাদ মরসুমে বর্তমান বাজার দর অনুপাতে কৃষি বিভাগের অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার টাকার গম উৎপাদন হবে বলে কৃষি বিভাগ আশা করছেন। গম উৎপাদনের অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য মাঠ পর্যায়ে গম ক্ষেত নজরদারীতে রেখে কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করে চলেছেন। ইতোমধ্যে এক শ্রেণির জমির মালিক ও ঘাস ব্যবসায়ীরা গাছান ও শীষযুক্ত গম কেটে গরু-ছাগলের গো-খাদ্য হিসেবে প্রকাশ্যে বাজারে বিক্রি করতে শুরু করেছে। এতে কৃষি বিভাগের গম উৎপাদনের অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়বে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে এ ধরণের প্রবণতা দ্রুত বৃদ্ধি পেলে প্রতি বছর খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন এলাকাবাসী। দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে এবার উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ও ১টি পৌরসভায় ৭৮ হেক্টর জমিতে গমের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তা বৃদ্ধি পেয়ে ২শত ৪২ হেক্টর জমিতে গমের চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং গমের জমিতে কোনো রোগ বালাই দেখা না দিলে অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১ হাজার ৮৯ মেট্রিক টন গম উৎপাদন হবে। আর উৎপাদিত এই গমের বর্তমান বাজার দর ২ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কৃষি বিভাগের দাবি গম উৎপাদনের অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য মাঠ পর্যায়ে গমক্ষেত নজরদারীতে রেখে কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করে চলেছে। দীর্ঘদিন ব্লাস্ট ক্ষতিকারক ছত্রাকজনিত রোগের কারণে গম চাষ করতে না পারায় গম চাষের সময় এলে বুকের ভেতর কেঁপে উঠতো। এবার যখন জানতে পারলাম এলাকায় গম চাষ হবে তখন থেকে ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে গমের আবাদ করেছি। গমের চারা ভালো গজিয়েছে গাছান ভালো হয়েছে। ফলন ও গমের বাজার দর ভালো পেলে আমাদেরসহ এলাকার গম চাষিদের মুখে দীর্ঘদিন পর হাসি ফুঁটে উঠবে। তবে এলাকার অনেকে গম গাছান হওয়ার পর গমক্ষেত গো-খাদ্য হিসেবে বিক্রি করে দিচ্ছে। গম চাষিরা গম উৎপাদনের চেয়ে গো-খাদ্য হিসেবে বিক্রি করে বেশী লাভবান হচ্ছে। এক জমিতে একবার গম উৎপাদন হয়। আবার একই জমিতে গো-খাদ্য হিসেবে দুইবার গম বপন করা হচ্ছে। তুলনামূলকভাবে গমের উৎপাদনের চেয়ে গাছান গম গো-খাদ্য হিসেবে বিক্রি লাভজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের এলাকায় দেড় বিঘা জমিতে আগাম গম আবাদ করে ২২ হাজার টাকায় গাছান গম বিক্রির রেকর্ড রয়েছে। গমের গাছান ঘাস বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ঘাস ব্যবসায়ীরা নগদ টাকায় নিজ খরচে ক্ষেত থেকে দ্রুত কেটে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। এ পন্থায় গম চাষি ও ঘাস ব্যবসায়ী উভয়েই লাভবান হচ্ছে। আবার ঘাস ব্যবসায়ীরা জমি লিজ নিয়ে গম চাষ করে গাছান হওয়ার পর বাজারে বিক্রি করার প্রবণতা দেখা দিয়েছে।
দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গাছান গম ঘাস ব্যবসায়ী জসিম, ইসলাম ও রুহুল বলেন, জমির মালিকের নিকট থেকে সরাসরি গাছান গম গো-খাদ্য হিসেবে ক্রয় করে প্রতিদিন বাজারে বিক্রি করে থাকি। আবার জমির মালিকদের নিকট থেকে জমি লিজ নিয়ে গো-খাদ্য হিসেবে গম বোপন করে গাছান করেও বিক্রি করি। এ পন্থায় একই জমিতে গো-খাদ্য হিসেবে দুইবার গম বোপন করা হয়। তাতে তুলনা মুলক ভাবে গমের উৎপাদনের চেয়ে গাছান গম গো-খাদ্য হিসেবে বিক্রি লাভজনক। এতে আমাদের সবার রুটি রুজি সহ পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা খুজে পেয়েছি। এ কাজে কেউ কখনো বাঁধা দেয়নি। গাছান গম গো-খাদ্য হিসেবে বিক্রি করা কোন অপরাধ কিনা জানা নেই। গাছান গম ঘাস ক্রয়কারী দামুড়হুদা গ্রামের নদীর বলেন নিজেদের পোষ্য গরু ছাগলের জন্য প্রতিদিন এখান থেকে ১০ টাকা আটি হিসেবে চার আটি করে গম ঘাস ক্রয় করি। এ গম ঘাস গরু ছাগল খুব খায়, তাছাড়া অন্যান্য ঘাস যেমন নেপিয়ার এসময় পাওয়া যায় না। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকতা অভিজিৎ কুমার বিশ্বাস বলেন ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে চুয়াডাঙ্গা জেলায় গম ক্ষেতে ব্লাস্ট ক্ষতিকারক ছত্রাকজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। রোগ প্রতিরোধে কৃষি বিভাগ মাঠ পর্য়ায়ে গম চাষিদের সাথে নিয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণের উপায় ও করনীয় বিষয় ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে। ওই সাল থেকে এলাকায় কৃষি বিভাগের নজরদারীতে গম চাষ বন্ধ ছিলো। অনেক চাষি নিজ উদ্যোগে গম চাষ করলেও আশানুরুপ ফলন হয়নি। উপজেলায় এবার ২শত ৪২ হেক্টর জমিতে গমের চাষ হয়েছে। বাই গম ২৮-৩৩ উচ্চ ফলন ও সহনশীল জাতের গম চাষের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ২০১৯ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত গম চাষের উৎকৃষ্ট সময় ছিলো। মাঠ পর্যায়ে গম চাষের প্রদর্শনী প্লট দেয়া রয়েছে। গম জাতীয় ঘাসের দাম বেশী হওয়ার কারণে চাষিরা গো-খাদ্য হিসেবে কেটে ফেলছে। গম খাদ্য শস্য হিসেবে চাষ হলেও বেশী লাভের আশায় গাছান গম গো-খাদ্য হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। গাছান খাদ্য শস্য গো-খাদ্য হিসেবে নয় বরং গো-খাদ্য হিসেবে নানা প্রজাতির ঘাস আবাদ করতে চাষিদের উৎসাহিত করলে খাদ্য শস্য উৎপাদনের টার্গেট অর্জিত হবে এবং আমদানি নির্ভরশীল গম উৎপাদনে সহায়ক হবে।
Show quoted text
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মদ বেল্লাল তালুকদার
প্রধান কার্যালয় ফ্লাট#এ ৫ ট্রফিকাল হোম ৫৫/৫৬ শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন রোড মগবাজার রমনা ঢাকা-১২১৭
মোবাইল নং- 01712573978
ই-মেইল:- ajkercrimenews@gmail.com
Copyright © 2025 আজকের ক্রাইম নিউজ. All rights reserved.