০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:০৪ অপরাহ্ন, ৫ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, বুধবার, ২৪শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অনলাইন ডেস্ক::দেশে ফিরে সৌদি আরবে ঘটে যাওয়া নির্যাতনের আরও ভয়াবহ তথ্য দিলেন সুমি আক্তার।
সৌদি আরব থেকে শুক্রবার সকাল সোয়া ৭টায় এয়ার এরাবিয়ার একটি ফ্লাইটে ঢাকা পৌঁছান। এর পর সন্ধ্যায় শুক্রবার সন্ধ্যায় তার নিজ জেলা পঞ্চগড়ে ফিরে গণমাধ্যম কর্মীদের মুখোমুখি হন সুমি। তুলে ধরেন নির্মম নির্যাতনের কথা।
দেশে ফিরে নির্যাতিত সুমি জানান, অষ্টম শ্রেণি পাস করার সময় দুই বছর আগে ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্টে কাজ শুরু করেন। সেখানেই নুরুল ইসলাম নামে আশুলিয়ার চারাবাগ এলাকার এক যুবকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ঢাকার যাওয়ার ছয় মাস পর তাকেই বিয়ে করেন সুমি। গত ৩০ মে স্বামীর নুরুল ইসলাম তাকে ‘রুপসি বাংলা ওভারসীজর মাধ্যমে গৃহকর্মী ভিসায় সৌদি আরবের রিয়াদে পাঠান।
সুমি জানান, সৌদিতে তাকে একটি রুমে আটকে রেখে দিনের পর দিন নির্যাতন করা হয়েছে। সৌদিতে নির্যাতিত হয়ে আমি ভেবেছিলাম আর কোনদিনে দেশে ফিরতে পারব না। সেখানে যাওয়ার পর প্রথম কর্মস্থলে মালিক তাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতেন, মারধর করতেন, হাতের তালুতে গরম তেল ঢেলে দিতেন এবং কক্ষে আটকে রাখতেন।
সুমি আরও জানান, এক পর্যায়ে সুমি অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই মালিক তাকে না জানিয়ে সৌদি আরবের ইয়ামেন সীমান্ত এলাকায় নাজরানের এক ব্যক্তির কাছে প্রায় ২২ হাজার রিয়ালে বিক্রি করে দেন। ওই মালিকও তাকে নির্যাতন করেন।
উদ্ধার হওয়ার আগে ১৫ দিন তাকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছিল। ঠিকমতো খাবার দেয়া হয়নি। একসময় খুব কান্নাকাটি করে স্বামীর সঙ্গে একটু কথা বলার জন্য ফোনটি চেয়ে নেন সুমি।
তারা ফোন ফিরিয়ে দিলে বাথরুমে গিয়ে একটি ভিডিও ধারণ করেন সুমি। সেই ভিডিওতে নিজেকে নির্যাতনের কথা জানিয়ে তার স্বামীর কাছে পাঠিয়ে দেন তিনি। পরে ওই ভিডিওটি তার স্বামী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন এবং বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের অবহিত করেন।
পরে অনলাইনে ভিডিওটি ভাইরাল হলে বিষয়টি সরকারের নজরে আসে। এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় দেশে ফিরতে পারি। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তিনি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
সুমির পাশাপাশি সৌদিতে চলমান ধরপাকড়ের শিকার হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে দেশে ফেরেন আরও ৮৬ বাংলাদেশি।
শুক্রবার সকালে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে তাকে গ্রহণ করেন। এ সময় প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেখানে আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদনে সহযোগিতা করেন।
পরে সুমিকে বিমানবন্দর থেকে বের করে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের একটি দল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় গাড়িতে করে পঞ্চগড়ের উদ্দেশে যাত্রা করে। এ সময় এমনকি সুমির স্বামী নুরুল ইসলাম বিমানবন্দরে এলেও তার সঙ্গেও দেখা করতে দেয়া হয়নি।
সুমির বাড়ি পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার বৈরাতি সেনপাড়া গ্রামে। তার বাবা মো. রফিকুল ইসলাম ও মা মল্লিক বেগম।
শুক্রবার বিকালে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় বোদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ মাহমুদ হাসান সুমিকে তার বাবা রফিকুল ইসলামের নিকট তুলে দেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপ-পরিচালক আবু হেনা মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল, বোদা উপজেলার পাঁচপীর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির প্রধানসহ গণমাধ্যমকর্মীরা।