০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫১ পূর্বাহ্ন, ৩০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, মঙ্গলবার, ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পিরোজপুর প্রতিনিধিঃ শিক্ষা অফিসারকে জুতার মালা পড়ানোর মামলায় পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার চার প্রাথমিক শিক্ষককে সাজা দিয়েছেন পিরোজপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত । সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে কাউখালী উপজেলার ১ নং সয়না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো: উজ্জ্বল মিয়াকে ১ বছর ৬ মাসের সাজা দিয়ে সাজা পরোয়ানা মূলে জেল হাজতে প্রেরণ করেন এবং ৩৫ নং কেশরতা সুজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক বাদল হালদার, ১৪নং মধ্য সোনাকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শ্যামল হালদার ও ৩৭নং শংকরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জলিল খানকে প্রত্যেককে ৬ মাস করে কারাদন্ডাদেশ দিয়ে আসামীরা আপীল দায়ের করা সাপেক্ষে জামিনের আবেদন করলে আদালত তাদেরকে আপিল দায়ের করার জন্য অন্তর্বতি কালীন জামিন প্রদান করেন। বুধবার (১৩ নভেম্বর) সকালে পিরোজপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৩ এর বিচারক মেহেদী হাসান এ রায় ঘোষণা করেন। এর মধ্যে সয়না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো: উজ্জ্বল মিয়া একই ঘটনায় বিভাগীয় মামলায় সরকারি কর্মচারী ( শৃংখলা ও আপীল ) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৪ (৩)(ঘ) মোতাবেক চাকুরী হতে বরখাস্ত আছেন। একই অভিযোগে বাকি তিনজনের মধ্যে বাদল হালদার ও শ্যামল হালদার চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত আছেন এবং আব্দুল জলিল খান চাকুরীর ৫৯ বছর পূর্তি হওয়ায় বেতন ভাতা না পেয়েই অবসরে আছেন ।
জানাযায়, শিক্ষক মো: উজ্জ্বল মিয়ার নেতৃত্বে অপর ৩ জন শিক্ষক তাদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে একছড়া জুতার মালা প্রস্তুত করে ২০০৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কক্ষে প্রবেশ করে প্রকাশ্য দিবালোকে জোরপূর্বক সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো: আমিনুল ইসলামের গলায় পড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা চালায় । তারা নিজেরাই আবার এ ঘটনা নিজেদের ক্যামেরাম্যান দ্বারা ছবি করিয়ে সংবাদ মাধ্যমে সরবরাহ করে । বিভাগীয় তদন্তে ঘটনা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ২০০৯ সালে চার জন শিক্ষকের বিরুদ্ধেই পৃথক পৃথক বিভাগীয় মামলা রুজুসহ তাদেরকে চাকুরী থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় । বিভাগীয় মামলার তদন্তে চার জন শিক্ষকের বিরুদ্ধেই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রত্যেককেই চাকুরী থেকে চূড়ান্ত বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য বিভাগীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কেন তাদেরকে চাকুরী থেকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হবেনা মর্মে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হলে উজ্জ্বল মিয়াার পক্ষ থেকে উক্ত নোটিশ চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা করা হয় । উজ্জল মিঞার মামলা আদালত খারিজ করে দেওয়ায় বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ বিভাগীয় মামলা নিষ্পত্তি করে উজ্জ্বল মিয়াাকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করেন । বাকী তিন শিক্ষকের বিভাগীয় মামলা নিষ্পত্তি প্রক্রিয়াধীন থাকে । এর মধ্যে শংকরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জলিল খান চাকুরীর ৫৯ বছর পূর্তি হওয়ায় বেতন ভাতা না পেয়েই অবসরে যান ।
একই অভিযোগে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে ২০০৯ সালে পিরোজপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দন্ডবিধি ৫০০/৫০১ ধারায় একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন । মামলা নং সি আর ১২১/২০০৯ । উক্ত মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত এ রায় দেন। বাদীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন তালুকদার স্বপন ও অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন ।
ভুক্তভোগী শিক্ষা অফিসার মো: আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি হলফ করে বলতে পারি, ব্যক্তি জীবনে কোন অসৎ ও অন্যায় কাজ আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি। একথা আমার সকল কর্মক্ষেত্রে সবাই জানে । ওই সকল স্বার্থাণ্বেষী শিক্ষকরা আমার কাছ থেকে অবৈধ কোন সুবিধা নিতে না পারায় যে অপকর্ম করেছে তার শাস্তি আরও আগে হওয়া উচিত ছিল । বিলম্বে হলেও বিজ্ঞ আদালতের এ রায়ে আমি সন্তুষ্ট । এ রায় সমাজের সকলের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে ।
বাদীপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী এ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, আইন অনুসারে সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা সবাই সরকারি কর্মচারী বিধায় সকলেই চাকরীচ্যুত হবেন