১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:০৫ পূর্বাহ্ন, ৭ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, শুক্রবার, ২৫শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ডেস্ক রিপোর্ট :
অবশেষে সরকারি বিশেষ নিরীক্ষায় ধরা খেয়ে প্রায় ৩২ কোটি টাকা ফেরত দিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মো. আফজাল। সোনালী ব্যাংক পাবলিক সার্ভিস কমিশন শাখায় উক্ত টাকা জমা দিয়ে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রত্যাহারের আহ্বান জানান তিনি। এ নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, গত ২৩ অক্টোবর চেক নং ১৪৬০৭০৮ মারফত উক্ত টাকা ফেরত দেয়া হয়। একদিনেই এতো টাকা ফেরত দেয়ার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেন সরকারের বিশেষ নিরীক্ষা দল। তারা বলেন, সরকারের বিশেষ নিরীক্ষা দল না এলে এ অর্থ কখনোই পাওয়া যেতো না। সম্প্রতি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি পরীক্ষার জন্য সরকার একটি বিশেষ নিরীক্ষা দল প্রেরণ করেন। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল অব বাংলাদেশ কার্যালয় থেকে এ নিরীক্ষা দল প্রেরণ করা হয়।
সিভিল অডিট বিভাগের এ নিরীক্ষা দল মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের ৯/৭/১৯ থেকে ৮/৮/১৯ পর্যন্ত সময়ে প্রকল্পের ডিপিপি, বরাদ্দ ও ব্যয়, ক্যাশবহি, লেজার বুক ও রেকর্ডপত্র যাচাই করে ৩১,৯৯,১৫,২২০/ টাকার একটি বড় ধরনের ঘাপলা পান। বিষযটি নিয়ে ইফা মহাপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তার পক্ষ থেকে বলা হয় এ টাকা ৬৪ জেলায় প্রেরণ করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে খবর নিলে দেখা যায় সেখানে এ টাকা প্রেরণ করা হযনি। ফলে বিষয়টি ইসলামিক ফাউন্ডেশনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
প্রতিনিধি দল ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহসহ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে বিষয়টি অবহিত করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে গত ২৩ অক্টোবর মহাপরিচালক সামীম মো. আফজাল একদিনেই উক্ত ৩১,৯৯,১৫,২২০/ টাকা চেক নং ১৪৬০৭০৮ মারফত ফেরত দেন। চেকের টাকা চালান নং টি-৩১ তারিখ ৩১ অক্টোবর, সোনালী ব্যাংক লি:, পাবলিক সার্ভিস কমিশন শাখা, আগারগাঁও, ঢাকা-১২০৭ এ সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়।
সাবেক বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা সামীম মো. আফজাল বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচলক হিসেবে কর্মরত। তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। রাতের বেলায় নিজের রুমে খাতায় লিখিয়ে আত্মীয়-স্বজনকে নিয়োগ পরীক্ষায় পাস করানো, জাল সনদপত্রে চাকরি দেয়া, কোটা না থাকায় নিজের ভাতিজা ও ভাগ্নিকে ভিন্ন জেলার বাসিন্দা দেখিয়ে চাকরি দেয়াসহ ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও ইফা বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন বেসরকারী ব্যাংকে টাকা এফডিআর করে কমিশন খাওয়া এবং ব্যাপক নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
গত জুন মাসে প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড সভায় রুগ্ন ব্যাংক হিসেবে পরিচিত ফার্মার্স ব্যাংকে এফডিআর করে রাখা সাড়ে ২৯ কোটি টাকা ফেরত আনার জন্য মহাপরিচালককে চাপ দেয়া হলে মহাপরিচালক উক্ত টাকা ফেরত আনতে ব্যর্থ হন। এর পর তার প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা হ্রাস করা হয়। ২০০৯ সাল থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন সামীম মো. আফজাল। নিয়মিত চাকরি শেষে ২ দফায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান তিনি। আগামী ৩১ ডিসেম্বর তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হবে।
উৎসঃ ইনকিলাব