০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫২ পূর্বাহ্ন, ৩০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, মঙ্গলবার, ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অনলাইন ডেক্স::
রাজনীতিতে খুব একটা সক্রিয় ছিলেন না তিনি। তবে পারিবারিক পরিচয়ে রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন নিয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেন। এরপরে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। পর পর দুইবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে আলোচনায় চলে আসেন ময়নুল হক মঞ্জু। তার বিরুদ্ধে উঠতে থাকে নানা অভিযোগ।
মূলত টিকাটুলির রাজধানী সুপার মার্কেট কেন্দ্রিক দখল, চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠতে থাকে তার বিরুদ্ধে। মার্কেটের নিয়ন্ত্রন ও চাঁদাবাজির ঘটনায় এক সময় র্যাবের সঙ্গেও বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। থানায় একাধিক মামলা হলেও তিনি ছিলেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তবে ক্যাসিনো বিরোধী ও দলে শুদ্ধি অভিযান শুরু হলে আবারো আলোচনায় চলে আসেন ময়নুল হক মঞ্জু। অবশেষে চাঁদাবাজির মামলায় র্যাব তাকে গ্রেফতার করে।
মঞ্জুর বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের
কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জু দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি করছেন এমন অভিযোগ ছিল টিকাটুলির রাজধানী সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীদের। তার বিরুদ্ধে অধিকাংশ অভিযোগই রাজধানী সুপার মার্কেট কেন্দ্রিক। র্যাব ও মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, মার্কেটের ১ হাজার ৮৮টি দোকান ঘিরেই ছিল মঞ্জুর সবকিছু। এর আগেও মার্কেটের ব্যবসায়ীরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, র্যাবের মহাপরিচালক, র্যাব-৩ ও র্যাব-১০-এর অধিনায়কের কাছে কাউন্সিলর মঞ্জুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চাঁদাবাজি বন্ধ করার নির্দেশনাও আসে। কিন্তু কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের এক সাবেক মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যের ছত্রচ্ছায়ায় তিনি অবৈধ কাজ করতেন।
রাজধানী সুপার মার্কেটের এক ব্যবসায়ী নেতা বলেন, কাউন্সিলর হওয়ার পর মঞ্জু নিজেই মার্কেটের দখল নিয়ে নেন। তিনি নিজেকে সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করেন। মার্কেটে দোকান নেওয়া বা ছেড়ে দেওয়া দুই কাজের জন্যই তাকে টাকা দিতে হতো। প্রতি মাসে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তিনি অতিরিক্ত এক হাজার টাকা নিতেন। মার্কেটে বিদ্যুৎ যায় না, তারপরও তাকে জেনারেটরের বিল দিতে হয়। কেন্দ্রীয় শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের জন্য প্রত্যেক দোকানদারের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা করে নিয়েছেন, কিন্তু কোনো কাজই করেননি।
ময়নুল হক মঞ্জুর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলদারি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগে তিনটি মামলা রয়েছে। গত বুধবার রাতে ওয়ারী থানায় সর্বশেষ মামলাটি করেছেন রাজধানী সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী কাজী মো. রনি। মামলায় ময়নুল হক মঞ্জু ও তার ১২ অনুসারীকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় মঞ্জুর বিরুদ্ধে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ আনা হয়। গত বৃহস্পতিবার গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে র্যাব দুটি পিস্তল, কয়েক বোতল বিদেশি মদ, গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল ও যৌন উত্তেজক ওষুধ সামগ্রী জব্দ করা হয়। এঘটনায়ও তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করেছে র্যাব।
কাউন্সিলর হয়েও সিটি করপোরেশনের সভায় যেতেন না
মঞ্জুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, কাউন্সিলর হয়েও তিনি করপোরেশনের সভায় তেমন যেতেন না। ১৯টি বোর্ড সভার মধ্যে মাত্র চারটিতে উপস্থিত ছিলেন। ওয়ার্ডের সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে এই কাউন্সিলরের তেমন সম্পর্ক নেই। যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া তিনি সভায় অনুপস্থিত থাকায় ডিএসসিসি কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেও তিনি জবাব দেননি।
র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফি বুলবুল সাংবাদিকদের বলেন, ময়নুল হক মঞ্জু দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করে আসছিলেন। এ ছাড়া তিনি মাদক সেবন এবং মাদক কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত। তার অবৈধ কাজকর্ম এবং অর্থ উপার্জনের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে আসার পর গ্রেফতার করা হলো। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, দখলবাজি করে আমেরিকায় পরিবারের কাছে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠান তিনি।
মঞ্জু দশ দিনের রিমান্ডে
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দশ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ধীমান চন্দ্র মন্ডল মঞ্জুকে দশ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আদালত সূত্র জানায়, অস্ত্র আইনে মঞ্জুর সাত দিন ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মঞ্জুসহ তার গাড়ি চালক সাজ্জাদ হোসেনের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওয়ারী থানার এসআই হারুন অর রশিদ। আসামি পক্ষের আইনজীবী ওয়াজি উল্লাহ রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত অস্ত্র মামলায় মঞ্জুর পাঁচ দিন এবং মাদকের মামলায় মঞ্জু ও তার গাড়িচালক সাজ্জাদ হোসেনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মঞ্জুকে তার কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে র্যাব। ওই দিন রাতেই তার বিরুদ্ধে ওয়ারী থানায় অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দু’টি মামলা করেন র্যাব-৩ এর ডিএডি ইব্রাহিম হোসেন