০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:২৭ পূর্বাহ্ন, ৩০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, মঙ্গলবার, ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মনোয়ারা বেগম, একজন মা। তার ছয় সন্তানেরা সকলেই শিক্ষিত এবং প্রতিষ্ঠিত। আজ তার থাকার কথা কোন অট্টালিকায়, ছেলে-বৌমার মমতায় ঘেরা সংসারে, নাতী-নাতনীদের সহচার্যে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! তাকে পাওয়া গেল রাস্তায়, অসুস্থ্য অবস্থায় ভিক্ষা করছেন। স্থানীয় জনগণের নজরে আসলে তাকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। সেই মাকে দেখতে হাসপাতালে যান সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার, ভালোবাসার ছোঁয়ায় ভিজে উঠে মায়ের চোখ, হাসি ছড়িয়ে পড়ে মুখমন্ডলে। চিকিৎসাসহ তার সকল দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন পুলিশ সুপার। এগিয়ে আসে স্থানীয় প্রশাসন, সাংবাদিক সমাজ ও সমাজের অন্যান্য সুধীজন। পুলিশ ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সহযোগিতায় এক মা ফিরে পেল তার সম্মান, অধিকার ও মর্যাদা।
ঘড়ির কাটায় রাত ১১ টা বেজে ১০ মিনিট। অফিসার ইনচার্জের মুঠোফোন বেজে উঠলো। অপর প্রান্তে উদ্বেগ- উৎকন্ঠা ‘স্যার একজন মানুষকে রাস্তার পাশে হাত-পা-মুখ বেঁধে কারা যেন ফেলে রেখেছে। তাড়াতাড়ি কিছু একটা করেন’। ওসি সাহেব ওয়ারলেস সেট হাতে তুলে নিলেন। ১০ মিনিটের মধ্যে অফিসার পৌঁছে যায় ঘটনাস্থলে, যেখানে নাম না জানা একজন মানুষকে বেঁধে ফেলে রাখা হয়েছে। অফিসার তার হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দ্রুত নিয়ে গেলেন হাসপাতালে। তখনও সে অজ্ঞান। ঘটনার একদিন পর তার জ্ঞান ফিরে আসে এবং জানা যায় সে সিএনজি চালক। ছিনতাইকারীরা তাকে অজ্ঞান করে হাত-পা বেঁধে রাস্তায় ফেলে রেখে তার সিএনজি নিয়ে পালিয়েছে। এ যাত্রায় বেঁচে যায় সিএনজি চালক শামীম। মানুষের সহযোগিতা নিয়ে পুলিশ একজন মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে। সমাজের মানুষের সহযোগিতা ছাড়া পুলিশের পক্ষে এ কাজ করা আদৌ সম্ভব ছিলো না। এ ভাবে সমাজের মানুষের অংশ গ্রহণে সমাজের মানুষকেই পুলিশী সেবা অতি দ্রুত এবং অতি নিকটে পৌঁছে দেওয়ায় হলো আধুনিক পুলিশিং এর লক্ষ্য। সমাজের বা কমিউনিটির মানুষের সহযোগিতায় ও অংশগ্রহণে বাংলাদেশ পুলিশ অপরাধ দমন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় এবং সার্বিক আইন-শৃংখলা রক্ষায় যে কাজ করে থাকে সেটাই হলো কমিউনিটি পুলিশিং।.
বরিশাল জেলার কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম ঃ
বরিশাল জেলায় কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমের ফলে সেবা প্রদানকারীদের মধ্যে দূরত্ব কমে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় দ্রুত সময়ে পৌঁছে দেয়ার ফলে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং সরকারি কর্মকর্তাগণের প্রতি জনসাধারণের আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি জনাব শফিকুল ইসলাম, বিপিএম (বার), পিপিএম মহোদয়ের নির্দেশনায় বরিশাল জেলায় বাস্তবায়নকৃত কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম নি¤েœ প্রদত্ত হ’ল ঃ
১। কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি গঠন ও সচেতনতামূলক সভা ঃ
বরিশাল জেলার প্রত্যেক থানার ইউনিয়ন ও পৌরসভা পর্যায়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে মোট ৮৮১টি “কমিউনিটি পুলিশিং” কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার সদস্য সংখ্যা ২৭,৯৮০ জন। চলতি বছর ০১-০১-২০১৯ হতে ৩০-০৯-২০১৯ খ্রিঃ তারিখ পর্যন্ত মোট ৬৪৮টি “কমিউনিটি পুলিশিং” সভা করা হয়েছে। উক্ত কমিটির সদস্যদের নিয়ে প্রতি মাসে একাধিক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উক্ত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত থাকেন। কমিউনিটি পুলিশিং এর কার্যক্রমের ফলে অপরাধ সংঘঠিত হওয়ার পূর্বে বা তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ অবগত হয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। জঙ্গি, মাদক, নারী নির্যাতন ও সামাজিক অপরাধগুলো নিয়ন্ত্রণে ও অপরাধ সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদানে “কমিউনিটি পুলিশিং” কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২। স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি গঠন ও সচেতনতা সভা ঃ
বরিশাল জেলার থানা এলাকার প্রতিটি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুলিশের উপস্থিতিতে র্শিক্ষকদের সহায়তা নিয়ে ৫০টি স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি গঠন করা হয়েছে।উক্ত কমিটির সদস্য সংখ্যা ১০০৪ জন। চলতি বছর ০১-০১-২০১৯ হতে ৩০-০৯-২০১৯ খ্রিঃ তারিখ পর্যন্ত মোট ৬৭২টি “স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং” সভা করা হয়েছে। প্রতি মাসে থানার সংশ্লিষ্ট অফিসার এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উক্ত কমিটির সহায়তায় একাধিক সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করে থাকে। ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বাল্যবিবাহ, জঙ্গি, মাদকসহ বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তারা অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ও অপরাধ সংক্রান্তে তথ্য আদান প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন
৩। ওপেন হাউজ-ডে কার্যক্রম ঃ
জেলার প্রত্যেক থানা/ইউনিটে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট তারিখে এবং নির্দিষ্ট সময়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে একবার “ওপেন হাউজ ডে”অনুষ্ঠিত হয়। চলতি বছর ০১-০১-২০১৯ হতে ৩০-০৯-২০১৯ খ্রিঃ তারিখ পর্যন্ত মোট ৮৮টি “ওপেন হাউজ ডে” সভা করা হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকেন এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সদস্য বৃন্দ, অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা বৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সেবা প্রত্যাশী ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধ সংক্রান্তে অভিযোগ উত্থাপন করেন। ফলে অভিযোগের গুরুত্ব অনুযায়ী দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়।
৪। বিট পুলিশিং/উঠান বৈঠক ঃ
জেলার বিভিন্ন থানা এলাকাকে ১৪০টি বিটে বিভক্ত করে প্রত্যেক বিটে ১ (এক) জন অফিসারকে দায়িত্ব দিয়ে বিট পুলিশিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। চলতি বছর ০১-০১-২০১৯ হতে ৩০-০৯-২০১৯ খ্রিঃ তারিখ পর্যন্ত মোট ৪১২৩টি “বিট পুলিশিং/উঠান বৈঠক” সভা করা হয়েছে। বিট পুলিশিং অফিসারগণ নিজ নিজ বিট এলাকায় প্রতিমাসে একাধিকবার অপরাধ/অপরাধী সংক্রান্তে তথ্য সংগ্রহের নিমিত্তে এবং পারিবারিক ও সামাজিক ছোট খাটো আপোষযোগ্য অপরাধগুলো স্থানীয় পর্যায়ে আপোশ-মিমাংসার লক্ষ্যে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান হিসেবে উঠান বৈঠক করে থাকেন।
৫। ০১-০১-২০১৯ হতে ৩০-০৯-২০১৯ খ্রিঃ পর্যন্ত কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম ঃ
চলতি বছর ০১-০১-২০১৯ হতে ৩০-০৯-২০১৯ খ্রিঃ পর্যন্ত কমিউনিটি পুলিশিং, স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং, বিট পুলিশিং ও ওপেন হাউজ ডে সভার সংখ্যা নি¤েœ “ছক” আকারে প্রদান করা হ’ল ঃ
“ছক”
ক্রঃ নং থানার নাম
বিটের সংখ্যা সভার সংখ্যা
বিট পুলিশিং কমিউনিটি পুলিশিং স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং ওপেন হাউজ ডে
১ বাকেরগঞ্জ ১৯ ৬৫৩ ৪৮ ১০০ ৯
২ বাবুগঞ্জ ১০ ৩২৯ ১৮৯ ১৩৪ ৯
৩ উজিরপুর ২০ ৫৭২ ৪৮ ৫৬ ৯
৪ বানারীপাড়া ১৭ ৫৮৯ ৭২ ৬২ ৯
৫ গৌরনদী ১৬ ৩৭১ ৪২ ৪৯ ৯
৬ আগৈলঝাড়া ০৭ ৩০৬ ৫১ ৫৪ ৯
৭ মুলাদী ১৬ ৪২১ ৪৪ ৭১ ৯
৮ হিজলা ১১ ২৩৭ ৬৩ ৬৩ ৯
৯ মেহেন্দিগঞ্জ ১৫ ৪৬১ ৪৩ ৩৭ ৯
১০ কাজিরহাট ৯ ১৮৪ ৪৮ ৪৬ ৯
সর্বমোট ১৪০ ৪১২৩ ৬৪৮ ৬৭২ ৯০
৬। আত্মসমর্úনকৃত মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীদের পুনর্বাসন/লিগ্যাল এইড কার্যক্রম ঃ
চলতি বছর ০১-০১-২০১৯ হতে ৩১-০৯-২০১৯ খ্রিঃ তারিখ পর্যন্ত মোট ২৩৪ জন মাদক ব্যবসায়ী/মাদক সেবী আত্মসমর্পন করেছে। তম্মধ্যে ২৮ জনকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় একাধিক মাদক সেবী ও মাদক বিক্রেতাগণ তাদের অপরাধ সংক্রান্তে অনুশোচনা পূর্বক পুলিশের নিকট আত্মসমর্পন করলে তাদেরকে পুনর্বাসনের জন্য বিধি মোতাবেক মাদক নিরাময় কেন্দ্রে প্রেরণ করা হচ্ছে, যার ফলে সুস্থ্য হয়ে পরিবারে ফিরে এসে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে। উঠান বৈঠক, ওপেন হাউজ-ডে, কমিউনিটি পুলিশিং সভায় এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে থানা পুলিশ ও জেলা পর্যায়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উক্তরূপ অপরাধীদের খোঁজ খবর রাখছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদেরকে ঈদ সামগ্রী, শীত বস্ত্র বিতরনসহ সমাজের ধর্ণাঢ্য/উদ্যোক্তা ব্যক্তিদের সহায়তায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইতোপূর্বে মাদক সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলায় জড়িত অপরাধীদের আইনগত সহায়তা প্রদানের জন্য জেলা লিগ্যাল এইড এর সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখে আইনের সহায়তা গ্রহণের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। মাদক সংক্রান্ত অপরাধীদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে লিগ্যাল এইড ও সমাজসেবা অফিসারদের সাথে সংশ্লিষ্ঠ থানার অফিসার ও জেলার উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ প্রতিনিয়ত যোগাযোগ অব্যাহত রাখছেন ও তদারকি করছেন। এছাড়া রেঞ্জ ডিআইজি মহোদয়ের তত্ত্বাবধানে আত্মসমর্পণকৃত মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীদের নিয়ে সরকারি নিবন্ধনকৃত “স্বপ্নতরী” নামক সমবায় সমিতি গঠন করা হয়েছে।
৭। কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বর সম্বলিত কার্ড তৈরি ঃ
থানার ডিউটি অফিসার, অফিসার ইনচার্জ, সার্কেল এএসপি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং পুলিশ সুপারের মোবাইল নম্বর ও বিভিন্ন ধরণের সামাজিক সচেতনতামূলক স্লোগান সম্বলিত দৃষ্টি নন্দন ভিজিটিং কার্ড করা হয়েছে। ভিজিটিং কার্ডের পিছনে কোন্ থানায় এবং কোন্ তারিখ “ওপেন হাউজ ডে” অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে তথ্য প্রদান করা হয়েছে। এর ফলে জনসাধারণের সাথে পুলিশের সম্পর্ক সূদৃঢ় হয় এবং জনসাধারণ সহজেই তাদের যেকোন সমস্যা উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের অবহিত করতে পারেন।
৮। তথ্য/অভিযোগ বক্স ঃ
রেঞ্জ ডিআইজি মহোদয়ের সদয় নির্দেশনার প্রেক্ষিতে বরিশাল জেলায় গত ১২-০৯-২০১৭ খ্রিঃ তারিখ তথ্য/অভিযোগ বক্সের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। বরিশাল মহানগরীর কোতয়ালী মডেল থানা এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে ১৭টি ও জেলাধীন ১০টি থানা এলাকার জন গুরুত্বপূর্ণ স্থান সমূহে ৫৬টি সহ সর্বমোট ৭৩টি তথ্য/অভিযোগ বক্স স্থাপন করা হয়। অভিযোগ বক্স স্থাপনের বিষয়ে স্থানীয় জনগণকে উদ্বুদ্ধ করণ সহ তথ্য বক্সে অভিযোগ দাখিল করার জন্য মহানগর ও থানা এলাকায় মাইকিং এবং লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়। ফলে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে উদ্বুদ্ধ হয়ে অভিযোগ বক্সে অভিযোগ দাখিল করছেন। চলতি বছর ০১-০১-২০১৯ হতে ৩০-০৯-২০১৯ খ্রিঃ তারিখ পর্যন্ত তথ্য/অভিযোগ বক্সে মোট ৮৬টি অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। মেট্রোপলিটন এলাকার বক্স সমূহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর), বরিশাল এবং থানা সমূহের সংশ্লিষ্ট সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার/এএসপি গণ নিয়মিত খুলে থাকেন। পরবর্তীতে জেলা পুলিশ সে সকল বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।
৯। ডেঙ্গু ও গুজব সংক্রান্তে সচেতনতামূলক প্রচারণা ঃ
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকার নির্দেশে ৫ (পাঁচ) সদস্য বিশিষ্ট ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট টিম গঠন করা হয়েছে। উক্ত টিম যে কোন সমস্যা সর্ম্পকে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। অত্র জেলায় প্রত্যেক থানার ইউনিয়ন, পৌরসভা ও স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে “কমিউনিটি পুলিশিং”, “স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং” ও “ওপেন হাউজ ডে” ইত্যাদি সভার মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধকল্পে ও “ছেলে ধরা” গুজব সর্ম্পকে জনসাধারণকে সচেতন করা হচ্ছে। বরিশাল জেলা পুলিশের ডেঙ্গু প্রতিরোধকল্পে প্রত্যেকটি থানা এলাকায় লিফলেটের মাধ্যমে জনসাধারকে সচেতনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
১০। সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি ও কমিউনিটি পুলিশ ঃ
গত ২৪-০৮-২০১৯ ইং তারিখ বাকেরগঞ্জ থানাধীন কাঠালিয়া গ্রামের পাটীকর পাড়ায় অবস্থিত সার্বজনীন পূজা মন্দিরে স্থানীয় এক ছেলে আকস্মিকভাবে আক্রমন করে প্রতিমা ভাংচুর করে। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষোভ প্রশমনে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম। ঘটনার পরদিন জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও অন্যান্য সদস্যগণ জেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির সদস্য ও হিন্দু সম্প্রদায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে পাটীকর পাড়ায় উক্ত মন্দিরের পাশে শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে সমাবেশ করেন। কমিউনিটি পুলিশের এই কার্যক্রম উক্ত এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়কে দারুনভাবে আশ^স্ত করে, তাদের ক্ষোভ প্রশমন করে এবং হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতিকে আরও সুদৃঢ় করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
উপসংহার ঃ
বরিশাল জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম জেলা পুলিশের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে চলেছে। জেলা কমিউনিটি পুলিশ প্রতিনিয়ত ছোট ছোট কাজ করে যাচ্ছে, যা একদিন অনেক বড় সাফল্যে রূপ নেবে বলে আমরা মনে করি। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেবার জন্য আমরা যাচ্ছি সরকারী শিশু পরিবারে, তাদের সাথে গল্প করছি, তাদের সাথে খাবার খাচ্ছি। শীতের রাতে আমরা ছুটে যাচ্ছি সমাজের নি¤œ আয়ের মানুষ, রাস্তায় বা লঞ্চ ঘাটে রাত্রীযাপন করা মানুষের কাছে তাদেরকে একটু উঞ্চতা দেবার জন্য। আমরা ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের পাশে দাড়াচ্ছি, ভাগাভাগি করে নিচ্ছি উৎসবের মুহুর্তগুলো, দৌড়ে যাচ্ছি তাদের বিপদের সময়। এ ভাবে বরিশাল জেলা পুলিশ কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমের মাধ্যমে নিরলসভাবে কাজ করে সমাজের মানুষকে নিরাপত্তা দিয়ে, আইনি সহায়তা দিয়ে, সেবা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে বিশেষ অবদান রাখবে বলে আমরা মনে করি। কমিউনিটি পুলিশিং ডে-২০১৯ এর প্রতিপাদ্য বিষয়কে মনে প্রানে বিশ^াস করে বলব-
‘পুলিশের সঙ্গে কাজ করি,
মাদক-জঙ্গী-সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গড়ি’।
মনোয়ারা বা শামীমরা কোন কাল্পনিক চরিত্র নয়, বাস্তবতার কষাঘাতে জর্জরিত এই সমাজেরই মুখচ্ছবি তারা। জীবনে চলার পথে অনেক মনোয়ারা বা শামীমদের দেখা পাবো, আমরা শুধু হাত বাড়িয়ে তাদের দুঃখ ছোঁবো, তাতেই হয়তো বদলে যাবে তাদের জীবন। তাদেরকে আমরা নিরাপত্তা দিতে চাই, সেবা দিতে চাই, এগিয়ে নিতে চাই সমাজের মূল ¯্রােতের সাথে। এই কার্যক্রমে আপনাদের সকলকে আমাদের পাশে পাবো এই প্রত্যাশা রাখি।
সকলকে ধন্যবাদ।
মোঃ সাইফুল ইসলাম, বিপিএম (বার)
পুলিশ সুপার, বরিশাল।