০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:০১ অপরাহ্ন, ৫ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, বুধবার, ২৪শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আওয়ামী লীগের দুই নেতা, তাদের কর্মচারী ও বন্ধুর বাড়িতে র্যাবের তল্লাশি ভল্টভর্তি বিপুল পরিমাণ টাকা, অস্ত্র, সোনা উদ্ধার
নিজস্ব প্রতিবেদক
মাত্র তিন বছরেই ৩০টি বাড়ির মালিক আওয়ামী লীগ নেতা এনু!
এনামুল হক এনু
এনামুল হক এনু। তিনি পুরান ঢাকার গে-ারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তার ভাই রুপন ভূঁইয়া। তিনি একই কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক।
এই দুই ভাইয়ের আরেক পরিচয় রয়েছে। তারা কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ ওরফে ক্যাসিনো সাঈদের ব্যবসায়িক পার্টনার। ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনোর অংশীদার।
থানা পর্যায়ের আওয়ামী লীগের এই দুই নেতার টাকা রাখার জায়গা নেই। তাদের টাকায় ঠাসা একে একে পাঁচটি ভল্ট খুঁজে পেয়েছে র্যাব। আরও একটি ভল্টে মিলেছে স্বর্ণালঙ্কার। অত্যাধুনিক অস্ত্র আর গোলাবারুদও উদ্ধার হয়েছে তাদের বাসা থেকে। শুধু তা-ই নয়, র্যাব ঢাকাতেই এনামুলের ১৫টি বাড়ির সন্ধান পেয়েছে।
এনামুলের আরও অন্তত ৩০টি বাড়ি রয়েছে বলে তাদের কাছে সংবাদ রয়েছে। অভিযান পরিচালনাকারী র্যাব কর্মকর্তারা টাকা, অস্ত্র আর স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধারের পর হতবাক। স্থানীয়রা বলেছেন, আগে এই দুই ভাই ক্যাসিনোর খেলোয়াড় ছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তারা নিজেরাই মালিক বনে যান ক্যাসিনোর। যেন আলাদিনের চেরাগ চলে আসে হাতে। মাত্র তিন বছরেই হু হু করে বাড়তে থাকে তাদের বিত্তবৈভব। ঢাকায় একে একে বাড়ি কিনতে থাকেন তারা। মাত্র তিন বছরে এনামুল হক এনু ৩০টি বাড়ি মালিক বনে গেছেন। আজ সিঙ্গাপুর তো কাল ব্যাংকক। রাতারাতি ভাগ্যের পরিবর্তনের বিষয়টি এলাকার মানুষের চোখ এড়ায়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সূত্রাপুরের বানিয়ানগরে তাদের বাড়িতে র্যাব অভিযান চালিয়ে তিনটি ভল্টে খুঁজে পায় ১ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং ৭২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার। ছয়তলা ওই বাড়িতে অভিযান শেষে নারিন্দার লালমোহন সাহা স্ট্রিটে এনামুলের কর্মচারী আবুল কালাম কালু এবং শরৎগুপ্ত রোডে তার বন্ধু হারুনুর রশীদের বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় আরও দুটি ভল্ট থেকে মোট ৪ কোটি টাকা জব্দ করা হয়। এসব টাকা ক্যাসিনোর বলে র্যাবের ধারণা। তবে র্যাব জানিয়েছে, অভিযুক্ত দুই ভাই, বন্ধু বা কর্মচারীদের গ্রেফতার করা যায়নি। র্যাবের কাছে খবর রয়েছে, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর আগ মুহূর্তে কাউন্সিলর সাঈদের সঙ্গে সিঙ্গাপুর পাড়ি জমিয়েছেন তারা। আরেক ভাই রুপন দেশেই রয়েছেন। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। র্যাব কর্মকর্তারা বলেন, টাকা রাখার যায়গা না পেয়ে এ দুই ভাই সোনা কিনে রাখেন।
জানা গেছে, সোমবার মধ্যরাত থেকে র্যাব এনামুলের বানিয়ানগরের বাসা ঘিরে রাখে। গতকালের পৃথক তিন অভিযানে নগদ ৫ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হয়। গতকাল দুপুরে বানিয়ানগরে অভিযান শেষে র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফি উল্লাহ বুলবুল সাংবাদিকদের জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব এনামুলের পাঁচটি ভল্টে ক্যাসিনোর টাকা থাকার সন্ধান পায়। এনামুল ইংলিশ রোডের স্টিলের ফার্নিচার বিক্রির দোকান থেকে ভল্টগুলো ভাড়া নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে সূত্রাপুরের কাঠেরপুল লেনে ৩১ নম্বর বানিয়ানগরে এনামুলের ছয়তলা বাসার দ্বিতীয় ও পঞ্চম তলায় তিনটি ভল্ট পান তারা। এনামুল ও রুপন ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের অন্যতম শেয়ারহোল্ডার। ক্লাব থেকে ক্যাসিনোর লভ্যাংশের টাকা এনে তারা বাসায় রাখতেন। টাকার পরিমাণ বিপুল হওয়ায় তা রাখার জন্য অনেক বেশি জায়গা প্রয়োজন, তাই তারা স্বর্ণালঙ্কার কিনে ভল্টে রাখতেন। এনামুল হক এক সপ্তাহ আগে থাইল্যান্ড চলে গেছেন এবং তার ভাই রুপন ভূঁইয়া পলাতক। তবে র্যাব তাকে খুঁজছে। তারা টাকা অবৈধভাবে হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তর প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। এ জন্য তারা মানি লন্ডারিং আইনে অপরাধ করেছেন। তাদের ভল্ট থেকে যেসব অস্ত্র পাওয়া গেছে, এসব দিয়ে তারা স্থানীয় বিভিন্ন মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রভাব বিস্তার করে আসছিলেন। এনামুলের স্ত্রীর সংখ্যা একাধিক। তাদের মধ্যে একজন এ ভবনের পঞ্চম তলায় থাকেন। আর রূপনের মালিকানাধীন দোতলায় থাকেন তাদের এক বোন।
সরেজমিন জানা গেছে, বানিয়ানগর মুরগিটোলা মোড়ে ছয়তলা এ বাড়ির প্রথম তিনটি ফ্লোরের মালিক রুপন। আর ওপরের তিনটির মালিক এনামুল। আওয়ামী লীগের এ নেতার বাসায় অভিযানে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আক্তারুজ্জামানের সামনে ভল্ট খোলা হয়। এ সময় নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার ছাড়াও দুটি পিস্তল, দুটি এয়ারগান ও একটি শটগান জব্দ করা হয়।