১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:১৬ পূর্বাহ্ন, ৭ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, শুক্রবার, ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তিনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর। সেই অর্থে জনতার নির্বাচিত নেতা বা জননেতা। তা সত্ত্বেও জো’র করে জনগণের মুল্লুক দ’খল করার মা’রাত্মক প্রবণতা রয়েছে তার। রাজধানীর আদাবর-শ্যামলী এলাকার অতিসাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকারদলীয় কর্মী-নেতা- এমন অনেকের প্লট, বাড়ি-ফ্ল্যাট, জমি জো’র করে দ’খল করেছেন তিনি। এমন অন্তত ৫০টি অ’ভিযোগ রয়েছে। এসব ছাড়াও তার অ’বৈধ দ’খলের তালিকায় রয়েছে স’রকারের খাসজমি, ফুটপাত, এমনকি সড়ক পর্যন্ত।
এসব নিয়ে প্র’তিবাদ করতে কেউ সাহস পর্যন্ত পান না। কারণ সে ক্ষেত্রে নি’র্যাতন-নি’পীড়ন চা’লিয়ে ভু’ক্তভোগীদের এলাকা ছা’ড়া করা হয়। শুধু তাই নয়, চাঁ’দাবাজি, মা’দককারবারসহ বিভিন্ন অ’পকর্মের হোতাও নাকি তিনি। ডিএনসিসির ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের এ কা’উন্সিলরের নাম আবুল হাসেম হাসু। অ’ভিযোগ রয়েছে, তার এহেন অ’পকর্মের দোসর তারই ভাই আবুল কাসেম কাসু। হাসু-কাসুর অ’ত্যাচার আর দ’খলবাজির দৌ’রাত্ম্যে আদাবর-শ্যামলী এলাকার অনেক মানুষই এখন সর্বস্বান্ত।
জানা গেছে, হাসু-কাসুর বাবা এক সময় গ্রাম থেকে আখ এনে রাজধানীতে ফেরি করতেন। তখন তাদের বসবাস ছিল আগারগাঁও বস্তিতে। এর পর এক সময় রিকশা চু’রি করতে শুরু করেন দুই ভাই। নব্বই দশকের কথা এগুলো। সে সময় তারা রিকশা চো’রদের সর্দার ছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে। এ বস্তিতে তখন দেশের শীর্ষ স’ন্ত্রাসীদের অবাধ যাতায়াত ছিল। সেই সুবাদে স’ন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর সঙ্গে হাসু-কাসুর সখ্য গড়ে ওঠে। এ সখ্যকে পুঁজি করে ধীরে ধীরে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেন দুই ভাই। পরে অ’স্ত্রবাজ বা’হিনী গড়ে তুলে টে’ন্ডারবাজি-চাঁ’দাবাজিতে জ’ড়িয়ে পড়েন। তাদের সহযোগীদের বি’রুদ্ধে এখনো বেশ কয়েকটি হ’ত্যা মা’মলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় জনসাধারণ, রাজনীতিবিদ ও ভু’ক্তভোগীদের অ’ভিযোগ, গত দুই যুগে অন্তত শতাধিক প্লট ও ফ্ল্যাট দ’খল করেছেন হাসু-কাসু। এর মধ্যে অর্ধশতাধিক প্লট ও ফ্ল্যাট মালিককে ভ’য়ভী’তি দেখিয়ে সেসব সম্পত্তি নিজেদের নামে লিখিয়ে নিয়েছেন। কেবল জমি দ’খলই নয়, নতুন ভবন নির্মাণকারীর কাছ থেকে চাঁ’দা, দোকান ও অফিস থেকে মাসোহারা, মা’দক কারবারসহ সব অ’পকর্ম তাদের ছত্রছায়াতেই নাকি হয়। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমে বা’ধা, জমি ও বাড়ি দ’খল, খু’ন, ডা’কাতি ও লু’টপাটের অ’ভিযোগে দলটি থেকে তাকে এক সময় ব’হিষ্কার করা হলেও পরবর্তী সময়ে ওয়ার্ড কমিটির সদস্যপদ নিয়ে তিনি ফের দলে ফেরেন।
দেলোয়ার হোসেন নামে স্থানীয় একজন জানান, উত্তর আদাবরের ১৪৫/৩ প্লটটির মালিক তিনি। সন্তানদের ভবিষ্যৎ ভেবে সব সহায়সম্পত্তি বিক্রি করে তিনি এ প্লটটি কিনেছিলেন। সেটি এখন হাসু-কাসুর দ’খলে; নির্মাণ করা হয়েছে দোতলা ভবন। নিজের বেহাত জমি ফিরে পেতে দেলোয়ার হোসেন ২০১২ সাল থেকে দ্বারে দ্বারে কম ধরনা দেননি। দেখা করেছিলেন ডিএমপি ক’মিশনারের সঙ্গে। তার বরাবরে একটি আবেদনও করেছিলেন। তাতে কাজ না হওয়ায় আবেদন করেছিলেন আইজিপি ও স্বরাষ্ট্রম’ন্ত্রীর কাছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। সবেধন নীলমণি জমিটি সেই যে বেহাত হয়েছে, আর হাতে আসেনি।
কেবল দেলোয়ার হোসেনই নন, অন্তত দশজন ভু’ক্তভোগীর সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা হাসু-কাসুর কারণে সম্পত্তি হারিয়েছেন, উপরন্তু আ’তঙ্কে এলাকা পর্যন্ত ছে’ড়ে দিয়েছেন বলে অ’ভিযোগ করেছেন। বলছেন, গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা নিয়েও নাকি তারা শঙ্কিত।
অ’ভিযোগ আছে, আদাবরের ৬ নং রোডের মাথায় ২০৩ দাগে ৬৪ কাঠা এবং ২০৯ দাগে ১৬০ কাঠা জমি দ’খল করে রেখেছেন হাসু-কাসু। অনেক বছর ধরে দ’খল করা এ জমি ফিরে পেতে নানা জায়গায় দৌড়ঝাঁ’প করেছেন জমির মালিক আলী হোসেন। কিন্তু পাননি। উল্টো মা’মলা-হা’মলায় বিপর্যস্ত। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমি ক্লা’ন্ত, পরিশ্রান্ত ও হ’তাশ। পৈতৃক জমি বে’দখল হয়ে যাওয়া নিজের চোখে দেখতে হচ্ছে।
এলাকায় সম্ভ্রান্ত হিসেবে পরিচিত ইউসুফ হাজির পরিবার। কিন্তু এ পরিবারের মালিকানাধীন শেখেরটেকে ৩ কাঠা ও বায়তুল আমান হাউজিংয়ে সাড়ে ৫ কাঠা জমি হাসু-কাসু দ’খল করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। প্রতিকারের জন্য পুলিশের আ’ইজিপি থেকে শুরু করে সব স্তরেই তারা আবেদন করেছেন। কাজ হয়নি, ফেরত পাওয়া যায়নি জমি। ইউসুফ হাজির ছেলে ইয়াসিন রহমান বলেন, চোখের সামনে জমি বে’দখল হয়ে গেছে। কত জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করলাম। লাভ হয়নি। এখন আত্মসম্মান নিয়ে চলাই দা’য় হয়ে পড়েছে।
নবোদয় হাউজিংয়ে অন্তত চারটি প্লট, মালেক গলিতে দুটি, আদাবর ১৮ থেকে ৯ নং রোড পর্যন্ত অন্তত সাত থেকে দশটি প্লট দখল করেছেন কা’উন্সিলর ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা। এ ছাড়া আদাবর ১০ নং রোডের মাথায় ৫৯৫ নম্বরের ১০ কাঠা প্লট দ’খল করে সেখানে জাতীয় পার্টির কার্যালয় বানিয়ে দ’খলে রাখা হয়েছে। এ প্লটসংলগ্ন অনেক দোকানও রয়েছে। ১৩ নং রোডে জমি দ’খল করে প্রায় ১৮ থেকে ২০টি দোকান বানানো হয়েছে। হোসনাবাদ গার্মেন্টসের পশ্চিম পাশে ১০ কাঠা প্লট, এ ছাড়া আলিফ হাউজিংয়ে খাল দ’খল করে অফিস নির্মাণ, মনসুরাবাদ ব্রিজের পাশে জায়গা দ’খল করে অফিস নির্মাণ করা হয়েছে। কমফোর্ট হাউজিং ও সুনিবিড় মধ্যস্কুল এলাকায়ও কয়েকটি প্লট দ’খলে রয়েছে তার। আজিজ গার্মেন্টস নামে পরিচিত ভবনটির জায়গাও মাদ্রাসার নামে জো’র করে লিখে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
শেখেরটেক ও বায়তুল আমান হাউজিংয়ের ১০ নম্বর রোডের শেষ মাথায় পাঁচটি প্লট দ’খলে নিয়েছে হাসুর ঘনিষ্ঠ হাজি মোজাম্মেল হকসহ একটি সি’ন্ডিকেট। এ ছাড়া কমফোর্ট হাউজিংয়ের আদাবর ১৭/এ নম্বর রোডের শেষ মাথায় দুটি প্লট, ১৬ নম্বর রোডের কাঁচাবাজারের সাত কাঠা জমি দ’খল এবং কমফোর্ট হাউজিংয়ের ১৬/এ রোডের মসজিদ গলিতে জমি দ’খল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেছে কা’উন্সিলরের লোকজন। অন্যের জমি দ’খল করে কাঁচাবাজার বানিয়ে মাসে মাসে চাঁ’দা তু’লে যাচ্ছে তারা।
কা’উন্সিলর হাসুর হাত থেকে রে’হাই মিলছে না স’রকারদলীয় নেতাকর্মীদেরও। তিনি এলাকায় অনেক আগে থেকেই প্রভাবশালী। তদুপরি শাসকদলের মহানগর কমিটির শীর্ষপর্যায়ের এক নেতাও তাকে প্রশ্রয় দেন বলে গুঞ্জন আছে। ২০১২ সালের ১৪ নভেম্বর স’ন্ত্রাসীরা কু’পিয়ে মা’রাত্মক আ’হত করে আদাবর থানা ছাত