০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৬ পূর্বাহ্ন, ১লা জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, সোমবার, ১৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
অপ
গাজীপুর সদর ও সদর যুগ্ম সাব-রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে জমির মূল্য কম দেখিয়ে রেজিস্ট্রি করার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যানকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
একই সঙ্গে ওই সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেলে তিনি যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ওই সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের দলিল লেখক মো. আফসার উদ্দিনের করা এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। রিট মামলা নম্বর ৯৯৮৭/২০১৯।
গত ১০ অক্টোবর এ আদেশ দেন আদালত। আদেশের লিখিত কপি মঙ্গলবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে পাওয়া গেছে। রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানিতে আইনজীবী ছিলেন কাজী ওবায়দুর রহমান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতীকার চাকমা।
আগামী ২০ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় ভূমি রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বাংলাদেশের যে ২০ জন সাব-রেজিস্ট্রারের অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে, ওই তালিকায় গাজীপুর সদর ও সদর যুগ্ম সাব-রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলামের নামও রয়েছে।
রিট আবেদনকারী ও তার আইনজীবী জানান, ‘আমরা সন্দিহান যে, ওই সাব-রেজিস্ট্রার দেশের বাইরে যেতে পারলে আর ফিরে আসবে কি-না?’ তারা বলেন, এর আগেও গত আগস্টে আইন বিষয়ে পড়ার কথা বলে একবার লন্ডনে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। আইন মন্ত্রণালয় দুই বছরের (২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর) ছুটিও মঞ্জুর করেছিল। কিন্তু সে চেষ্টায় ব্যর্থ হন তিনি।
অসংখ্য দলিলের ফটোকপি রিট আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করে বলা হয়েছে, এভাবে জমির মূল্য কম দেখিয়ে একদিকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সাব-রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম।
আইনজীবী কাজী ওবায়দুর রহমান জানায় ‘মঙ্গলবারই আদেশের কপি দুদক কার্যালয়ে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে কে জানিয়েছেন, তিনি এখনও আদেশের কপির ব্যাপারে অবগত নন।
দলিলের নকল নেওয়ার ক্ষেত্রে শুনানী পদ্ধতির মাধ্যমে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে মনিরুলের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে দলিল লেখকরা বক্তব্য দিতে রাজি হয় না। কিন্তু আফসার উদ্দীন লিখিত অভিযোগ দিয়ে মামলা করেছেন। মামলার আদেশের পর বুধবার (১৬ অক্টোবর) রেজিস্ট্রি অফিসে গুজব ছড়িয়েছে মনিরুল গতকালই দেশ ত্যাগ করেছে বলে।
আফসার উদ্দীন যোগফলকে বলেন, গত ২৩ ফেব্রয়ারি তাকে মনিরুল হেনস্থা করার চেষ্টা করেন। ৪৬ জন দলিল লেখকের নিকট থেকে ৩০০ টাকার অলিখিত স্ট্যাম্পে মুচলেকা নিয়ে সনদ নবায়ন করেছেন। কয়েকজন দলিল লেখককে দীর্ঘদিন যাবত অফিসে প্রবেশে বাধা দেন। মনিরুল নিজে মাস্তান বাহিনী দিয়ে কাউকে কাউকে হুমকি দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন > সাব-রেজিস্ট্রার মনিরুলের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ
রিট আবেদনে বলা হয়, ওই সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে গত ২৭ জুলাই দুদক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, আইন মন্ত্রণালয়, নিবন্ধন অধিদপ্তর, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও গাজীপুরের ডিসি-এসপির কাছে লিখিতভাবে দুর্নীতির অভিযোগ দাখিল করা হয়। আবেদনে মোট ৩৯টি দলিলের নম্বর উল্লেখ করে বলা হয়, এসব দলিলসহ আরও অসংখ্য দলিলের মাধ্যমে জমির মূল্য কম দেখিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। দুদকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদন দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ইতোপূর্বে দলিল লেখক মজিবুর রহমান ও সাংবাদিক সোহরাব হোসেনকে সাজানো মামলা দিয়ে হেনস্থা করেছেন মনিরুল ইসলাম। কতিপয় গণমাধ্যমকর্মী মনিরুলের পক্ষ নিয়ে নানা রকম স্তুতি গাওয়ার চেষ্টা চালায়।