০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৭ পূর্বাহ্ন, ৩০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, মঙ্গলবার, ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার যোগীপোল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান ঘর দেয়ার কথা বলে এক ব্যাক্তির কাছ থেকে নেয়া ঘুষের ১০ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) উপস্থিতিতে এ টাকা ফেরত দেন তিনি। এর আগে প্রকল্পের নীতিমালা ভেঙে তাকে ঘর দেয়ায় সেটি ভেঙে দেয়া হয়।
ভুক্তভোগী আলী হাওলাদার অভিযোগ করেন, ফিরোজা নামে একজন ইউপি সদস্য ঘর দেয়ার আগে চেয়ারম্যানের নাম করে তার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নেন। ঘর নির্মাণের মালামাল পরিবহনের নামে এ টাকা নেয়া হয়। ঘর ভেঙে দেয়ার সময় চেয়ারম্যানের কাছে টাকা ফেরত চাইলে তিনি পরে দেবেন বলে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে ইউএনও’র নির্দেশে টাকা ফেরত দেন তিনি।
আলী হাওলাদার বলেন, ঘর পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ইউপি চেয়ারম্যান অনেকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের ‘জমি আছে, ঘর নাই’ প্রকল্পের আওতায় যোগীপোল ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন এলাকার আলী হাওলাদারকে ঘর পাইয়ে দেয়ার কথা বলে তার কাছ অগ্রিম ১০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন চেয়ারম্যান। পরে ওই প্রকল্পের আওতায় তাকে একটি ঘর তৈরি করে দেয়া হয়। আলী হাওলাদার এ প্রকল্পের আওতায় ঘর পাওয়ার যোগ্য না হওয়ায় এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। একপর্যায়ে আলী হাওলাদারের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ নেয়ার কথা জানাজানি হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে আলী হাওলাদার নিজেই ইউএনও’র কাছে অভিযোগ দেন। অভিযোগ পেয়ে ইউএনও বৃহস্পতিবার ওই ঘরটি ভেঙে দেন এবং ঘুষের টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত লোকজনের সামনে আলী হাওলাদারকে টাকা ফেরত দেয়া হয়।
ইউএনও মো. হাফিজ আল আসাদ বলেন, প্রকল্পটি আমার যোগদানের আগেই শুরু হয়েছে। প্রকল্পের নীতিমালা অনুযায়ী ওই ব্যাক্তি ঘর পাওয়ার যোগ্য না হওয়ায় সেটি ভেঙে দেয়া হয়েছে।
ঘুষের টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের পক্ষে স্থানীয় এক নারী মেম্বর ওই ব্যাক্তির কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নেন। সেই টাকা তাকে ফেরত দেয়া হয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী ওই ব্যক্তি ঘর পাওয়ার যোগ্য না হওয়ায় ঘরটি ভেঙে দেয়া হয়েছে। টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ওই সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না।
এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত মঙ্গলবার ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করে এর সত্যতা পান। এছাড়া ওই প্রকল্পের আওতায় ঘর পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এলাকায় ঝাড়ু মিছিল করেন ভুক্তভোগীরা। টাকা দিয়েও ঘর না পেয়ে ওই এলাকার বাসিন্দারা খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে ঘর পাইয়ে দেয়ার কথা বলে প্রায় দুই শত লোকের কাছ থেকে মাথা পিছু ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা ঘুষ নেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।