১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৭ পূর্বাহ্ন, ৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, বৃহস্পতিবার, ২৭শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আমাদের জীবন-মরণ ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে। তারা যা চায় তা-ই আমাদের করতে হবে। তারা চাইলে যেকোনো সময় আমাদের পিটিয়ে মেরে ফেলতে পারে। ছাদ থেকে ফেলে দিতে পারে। তাদের কথার বাইরে চলার কোনো সুযোগ নেই আমাদের।’
এভাবেই ছাত্রলীগের র্যাগিং ও নির্যাতনের বর্ণনা দেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ড. এম এ রশীদ হলের ১৫তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী।
ড. এম এ রশীদ হলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে এই ছাত্র বলেন, ‘আবরার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মারা গেছে। কিন্তু আমরা এই নির্যাতন সয়ে বেঁচে আছি। আবরারের হত্যার পর তার খুনিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে কিন্তু আমাদেরকে নিয়মিত যারা নির্যাতন করে, আহত করে তাদের কোনো বিচার হয় না। তারা নেতার বেশে দাঁপিয়ে ঘুরে বেড়ান।’
তিনি বলেন, ‘বুয়েটের এই হলে ছাত্রলীগের নির্যাতন অনেক দিনের। সাড়ে তিন বছরে আমি হলে থেকে বিভিন্ন নির্যাতন সহ্য করেছি। নির্যাতন সহ্য করার পর আমি হলও ছাড়তে পারি না। হলে উঠে যদি আবার হলে থেকে নেমে যাই, তাহলে ছাত্রলীগ আমাদের ক্যাম্পাসে আসতে না দেয়ার হুমকি দেয়। অনেক নির্যাতন দেখেছি। এর মধ্যে আমার বন্ধু নাসিমের নির্যাতনের ঘটনা খুবই মর্মান্তিক।’
নাসিম তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ছাত্রলীগের ঘটনা নিয়ে বুয়েটের একটি ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন-
‘গত বছরের ২৩ নভেম্বর ২০১৮, রাত ১১টা। পরেরদিন দিন অপারেটিং সিস্টেম অনলাইন (প্রেজেন্টেশন পরীক্ষা) থাকায় আমি আর আমার রুমমেট হাসিব পড়তেছিলাম। হঠাৎ ১০-১২ জন আমার রুমে ঢোকে। তাদের মধ্যে ১৪তম ব্যাচের ৫-৬ জন ,১৫-এর ৩-৪ জন বাকিরা ১৬, ১৭ এর ছিল। ১৪-এর মিনহাজ ভাই আমাদের জিজ্ঞেস করে, তোরা কে কে হল ফেস্টের টাকা দিস নাই। আমাদের রুমের কেইউ টাকা দিই নাই। আমি বললাম, ভাই, আমি হল প্রোগ্রামে থাকব না তাই টাকা দিব না। ১৪-এর বাধন ভাই বলল, হল ফেস্টে থাকিস বা না থাকিস টাকা দিতে হবে। ভাই, আমি হল ফেস্টে থাকব না, তো কেন টাকা দিব?’
‘মিনহাজ : বেয়াদব, তুই কীভাবে আমাদের মুখের ওপর এইভাবে না করতে পারিস। রুমে বড় ভাই ঢুকা সত্যেও তুই কীভাবে পড়তেছিস? (আমার ল্যাপটপ কোড রান করার জন্য ওপেন ছিল)। তুই কীভাবে এই হলে থাকিস আমি দেখে নিব। ফাহিম ওর সব কিছু নামা রুম থেকে।’
‘ফাহিম, ফাহিম বলে চিল্লাইয়া রুম থেকে চলে গেছে। ১৪-এর সবাই আমার ওপর চিল্লাচ্ছিল তখন কীভাবে আমি এইভাবে না করতে পারলাম। চিল্লানোর সাথে সাথে এত অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করতেছিল যে এই ধরনের গালি আমি জীবনে মুখেও আনতে পারব না। কিছুক্ষণ পর মেহেদি আর কায়েদ আমার রুমে ঢুকে জিজ্ঞেস করল, কী বলছিলাম আমি। আমি বললাম যে, ভাই, আমি হল কনসার্টে থাকব না, তাই টাকা দিব না। মেহেদি বলল, তোর এইভাবে বলা উচিত হয়নি।’