০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন, ১লা জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি, সোমবার, ১৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ সংক্রান্তে অনুসন্ধান প্রতিবেদনের গোপনীয় নথি ফাঁস করে মামলা দায়েরের ঘটনার প্রেক্ষিতে ঘুষ গ্রহণ ও ঘুষ দাবী করার ঘটনায় কতিপয় পুলিশের বিরুদ্ধে ৫টি বিভাগীয় মামলা দায়ের হয়েছে। বিভাগীয় মামলাগুলো বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়াও আরো ৩টি তদন্ত চলছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে,বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় নলছিটির মাও: কামাল হোসেন,বরিশাল নতুন বাজার এলাকার নাহার ইলেকট্রিকের জালাল মিয়া ও ডেফুলিয়ার নুরুজ্জামান পনু সাগরদী এলাকার গরু মনিরের বাড়ির ভাড়াটিয়া ইব্রাহিম মানিক ওরফে জ্বিন মানিকের দ্বারা প্রতারিত হওয়ায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। এতে এসআই আরাফাত হাসান উভয় পক্ষকে থানায় ডেকে ইব্রাহিম মানিক ওরফে জ্বিন মানিকের কাছ থেকে উল্লেখিত ব্যক্তিদের টাকা আদায় করে দেয়। এসব ডকুমেন্টারী অভিযোগের প্রেক্ষিতে বরিশাল থেকে প্রকাশিত আজকের সময়ের বার্তা পত্রিকার প্রথম পাতায় গত বছর ১৮ জানুয়ারী “নলছিটির নাশকতাকারী ইব্রাহিম এখন সাগরদীর ‘জ্বিন বাবা ‘মানিক শিরোনামে সংবাদ ছাপা হয়। ওই সংবাদের প্রেক্ষিতে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ স্মারক নং-বিএমপি(অপরাধ)/৫৪,তারিখ-২৫/০১/১৮ প্রকাশিত সংবাদ সংক্রান্তে অনুসন্ধান প্রতিবেদনের জন্য ডিবি’র ডিসির নিকট পাঠায়। বরিশাল ডিবির ডিসি তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য ডিবির এসি মো: সাখাওয়াত হোসেনকে দায়িত্ব অর্পন করেন। ডিবির এসআই ফিরোজ আহম্মদ এসি সাখাওয়াতের সাথে ইব্রাহিম মানিকের যোগাযোগ করে মোটা অংকের টাকার চুক্তি করে। অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে ডিবির এসি সাখাওয়াত হোসেন গত ৫/৩/১৮ তারিখ স্বাক্ষর করে সংবাদে অভিযুক্ত ইব্রাহিম মানিকের পক্ষে ও মামলা দায়েরে সহায়ক মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তদন্ত প্রতিবেদনের কপি ডিবির ডিসির নিকট দাখিল করেন। এবং দুই লক্ষ টাকার বিনিময়ে সরকারের ওই গোপনীয় তদন্তের কপি ইব্রাহিম মানিককে সরবরাহ করেন। ইব্রাহিম মানিক গোপনীয় তদন্তের কপি নিয়ে বরিশাল চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট নালিশী অভিযোগ দায়ের করলে আদালত বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানাকে এজাহার নেয়ার নির্দেশ দেয়। এতে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা দায়ের হয়। যার নং-৬৯ তারিখ-২৯/৩/১৮ এবং জি/আর-১৮২/১৮। মামলার তদন্তভার এসআই দীপায়ন বড়ালের উপর ন্যস্ত করা হয়। উক্ত মামলার সকল আসামীদের ঠিকানা নলছিটি হওয়ায় ইয়েস রিপোর্টের জন্য নলছিটি থানায় পাঠানো হয়। নলছিটি থানার এএসআই মেহেদী হাসান ইয়েস রিপোর্টের জন্য মাও: কামাল হোসেনের নিকট ৫ হাজার ও সাংবাদিক মু: মনিরুজ্জামান মুনিরের নিকট ৩ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করেন। এই ঘুষ দাবীর ঘটনায় সাংবাদিক মুনির আইজিপি কমপ্লেইন সেলে অভিযোগ দায়ের করলে তদন্তে সত্য বলে প্রমাণিত হয় এবং বিভাগীয় মামলা দায়ের হয়। ঝালকাঠির বিভাগীয় মামলা নং০১/১৯, যা স্বাক্ষী-প্রমাণ শেষে রায়ের অপেক্ষায় আছে।
উক্ত জি/আর ১৮২/১৮ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই দীপায়ন বড়াল গত বছর ৫ জুলাই মোবাইল ফোনে জানায় সকল আসামীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এতে সাংবাদিক মুনির ও মাও: কামাল হোসেন আদালতে গিয়ে জানতে পারেন যে চার্জশীট আদালতে দাখিল করা হয়নি। তখন মাও: কামাল কোতোয়ালি মডেল থানার বকশী সুকান্তকে ফোন দিলে তিনি চার্জশীট থেকে ধারা কমিয়ে দেওয়ার কথা বলে বরিশালে দেখা করতে বলেন। বকশী সুকান্তের কথানুযায়ী গত বছর ১১ জুলাই সাংবাদিক মুনির ও মাও: কামাল হোসেন পুলিশ লাইনের বিপরীতে কুটুম বাড়ি রেষ্টুরেন্টে দেখা করেন। তখন মামলার ধারা কমিয়ে দেয়ার কথা বলে এসআই দীপায়নের জন্য ১০ হাজার ও বকশী সুকান্ত নিজের জন্য ২ হাজারসহ মোট ১২ হাজার টাকা মাও: কামাল হোসেনের নিকট ঘুষ দাবী করেন। ওই সময় দীপায়ন বড়ালের সাথে মোবাইলে কথাও বলা হয়। উল্লেখিত ঘুষ দাবীর ঘটনা সাংবাদিক মুনির তার গোপন ক্যামেরায় ধারণ করেন ও গত বছর ১২ জুলাই বরিশাল অনলাইন ক্রাইমে প্রকাশ করেন। এতে এসআই দীপায়ন বড়াল ও সুকান্তকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। ওই ঘুষ দাবীর ঘটনায় এসআই দীপায়ন বড়ালের বিরুদ্ধে বরিশাল বিএমপির বিভাগীয় মামলা নং-২৭/১৮ এবং কনষ্টেবল বকশী সুকান্তের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা নং-২৩/১৮ দায়ের হয়। উক্ত বিভাগীয় মামলা দু’টি সহকারী পুলিশ কমিশনার নাসির উদ্দীন মল্লিকের নিকট বিচারাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই দীপায়ন ও বকশী সুকান্তের ঘুষ দাবীর ঘটনা ভাইরাল হলে ও পত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশ হলে উক্ত মামলার তদন্তভার দেয়া হয় কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই শামীম হোসেনের উপর। এসআই শামীম হোসেন তদন্তভার নেয়ার পর তিনিও মাও:কামাল হোসেনের নিকট মোটা অংকের ঘুষ দাবী করেন এবং বাখেরগঞ্জ থানার তৎকালিন ওসি মাসুদুজ্জামান দফারফা করে দেন। এর প্রেক্ষিতে গত বছর ২০ জুলাই বিকেলে এসআই শামীম হোসেন টাকা নিয়ে সাগরদী ডোষ্ট পাম্পের নিকট আসতে বলেন। তখন মাও: কামাল হোসেন সেখানে সাংবাদিক মুনির স্ত্রী ও বাচ্চাদের সাথে নিয়ে উপস্থিত হয়। এসময় এসআই শামীম হোসেন সাংবাদিক মুনিরের স্ত্রীর হাতে থাকা খামের মধ্যে ৫ হাজার নেন ও মাও: কামাল হোসেনকে আটক করেন। পরবর্তীতে গত বছর ৮আগষ্ট একদিনের রিমান্ডে এনে এসআই শামীম হোসেন ও বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার কনষ্টেবল ইউনুস মাও: কামাল হোসেনের বড় ভাই নুরুল হুদা ও স্ত্রী আফরোজার নিকট থেকে আবারও ৩ হাজার টাকা ঘুষ নেন। মাও: কামাল হোসেন জামিনে মুক্ত হয়ে এসআই শামীম হোসেন ও কনষ্টেবল ইউনুসের বিরুদ্ধে আইজিপি কমপ্লেইন সেলে অভিযোগ দায়ের করলে তদন্তে সত্যতা পাওয়ার পর দুটি বিভাগীয় মামলা দায়ের হয়। এসআই শামীম হোসেনের বিরুদ্ধে বরিশাল বিএমপির বিভাগীয় মামলা নং-২২/১৯ ও কনষ্টেবল ইউনুসের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা নং-২৩/১৯ দায়ের হলে এর তদন্তভার অর্পণ হয় বরিশাল ডিবির সহকারী পুলিশ কমিশনার নরেশ চন্দ্র কর্মকারের উপর। গত ৯ অক্টোবর উক্ত বিভাগীয় মামলা দুটোতে সাংবাদিক মুনির ও তার স্ত্রী শাহনাজ আক্তার এবং মাও: কামাল হোসেন ও তার বড় ভাই নুরুল হুদা স্বাক্ষী দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
অপরদিকে,সরকারের গোপনীয় নথি চুরি করে এবং মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করায় ডিবির তৎকালিক এসি সাখাওয়াত, এসআই ফিরোজ আহম্মদ ও কনষ্টেবল ইউনুসের বিরুদ্ধে সাংবাদিক মুনিরের দায়ের করা আরেকটি অভিযোগের তদন্ত চলছে। উক্ত অভিযোগটি তদন্ত করছেন বরিশাল ডিবির এডিসি মো: রেজাউল ইসলাম।