০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৩৩ পূর্বাহ্ন, ২রা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি, রবিবার, ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জলাবদ্ধতা নিরসন এবং পানি প্রবাহ সচলকরণসহ বেশ কিছু উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি)। এজন্য হবে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাব আকারে পাঠানো হয়েছে। যা বরিশাল সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে সব থেকে বড় প্রকল্প বলে আখ্যায়িত করেছে বিসিসির প্রধান নির্বাহী।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রস্তাাবিত ‘বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন খালসমূহের পাড় সংরক্ষণসহ উদ্ধার ও খনন’ শীর্ষক এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বরিশাল সিটি করপোরেশন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৭২ কোটি ৯৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। যার মধ্যে সরকারি অর্থায়নে ব্যয় করা হবে ১ হাজার ১১৪ কোটি ৩৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা বাকি অর্থ বরিশাল সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০১৯ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত।পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা বিভাগের এ বিষয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হবে। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শামীমা নার্গিসের সভাপতিত্বে সভায় প্রকল্পটির নানাদিক মূল্যায়ন করা হবে। সভায় প্রকল্পটির কোনো সংশোধন করতে হলে সেই পরামর্শ দিয়ে আবারও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। প্রকল্পটির সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে অনুমোদন দেবেন প্রধানমন্ত্রী। প্রকল্পটি সম্পর্কে পরিকল্পনা কমিশন সূত্র থেকে জানা গেছে, প্রস্তাবিত এই প্রকল্পটি ২০১৯-২০ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রকল্পটি সম্পর্কে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসরাইল হোসেন জানান, এই প্রকল্পটি প্রস্তুত করতে অনেকদিন ধরেই কাজ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে এটি হবে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে সব থেকে বড় প্রকল্প। এই হলে প্রায় ২০০ কিলোমিটার নতুন ফুটপাত ও নতুন নতুন রাস্তা নির্মাণ করা সম্ভব হবে। এছাড়া বর্তমানে যারা অবৈধভাবে বিভিন্ন খাল দখল করে আছে, তাদেরকে পুনর্বাসন করা হবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে। তিনি প্রকল্পটির প্রধান উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, প্রস্তাবিত এই প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বরিশাল শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন এবং পানি প্রবাহ সচলকরণ, বিশুদ্ধ পানির প্রবাহ নিশ্চিতকরণ।
এছাড় মশা ও দূষণমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, নৌপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের সহজীকরণ এবং খালগুলিতে দীর্ঘদিনের জমানো জৈব ও অজৈব পদার্থ অপসারণ করে নাব্যতা রক্ষা করাও হবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। প্রধাননির্বাহী আরো বলেন, বর্তমানে বর্ধিত খালের সংখ্যা ৪৬টি। বরিশাল পৌরসভাকে সিটি করপোরেশন করার পর থেকে এখন পর্যন্ত খাল খননের কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি। খালগুলো ভরাট হয়ে পানি প্রবাহ হ্রাস পেয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। পানি দূষিত হয়ে পরিবেশ দূষণ করছে। তিনি প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৯৮ খন মিটার খাল খনন (কোর এরিয়া), ৩ লাখ ৯৮ হাজার ১১৫ বর্গমিটার পাড় সংরক্ষণ-ব্লক ফুটপাত ও সবুজায়ন, ৩০টি ঘাটলা নির্মাণ, ১৬১৫টি বসার বেঞ্চ নির্মাণ, ৪৭ হাজার ৩৪৫ মিটার ড্রেন কাম ফুটপাত নির্মাণ, ১৯৫ আরসিসি ব্রিজ নির্মাণ, ৫৮ মিটার পিসি ব্রিজ নির্মাণ, ১ টি মিউজিক্যাল ফোয়ারা নির্মাণ, ২টি পিকআপ ক্রয়, ২টি এক্সাভেটর ক্রয়, ৬টি মোটরসাইকেল ক্রয়, ৩ লাখ ৯ হাজার ৬০ বর্গমিটার ১০টি পুকুর খনন, ওয়াকওয়ে, গার্ডেন লাইট ও সবুজায়ন করা হবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, বরিশাল সিটি করপোরেশন দেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় জোয়ারের পানি প্রায়ই নগরীতে প্রবেশ করে। তাছাড়া অতিবৃষ্টি, বন্যায় প্রায় প্রতি বছরই নগরী তলিয়ে যায়। কিন্তু খালসমূহ ভরাট হয়ে যাওয়ায় দ্রুত পানি নিষ্কাশন হয় না। বিসিসির খালসমূহ খনন ও খালের পাড় সংস্করণের জন্য যথেষ্ট আর্থিক সামর্থ্য নেই। তাই বাংলাদেশ সরকারের জিওবি অনুদান/সাহায্য সহযোগিতার জন্য এই প্রস্তাব করা হয়েছে। ৯৫ শতাংশ সরকারের অনুদান এবং ৫ শতাংশ বরিশাল সিটি করপোরেশনের রাজস্ব খাত থেকে ব্যয় নির্বাহের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।