১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:৩৩ অপরাহ্ন, ১৬ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি, রবিবার, ৩রা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
দুয়ারে কড়া নাড়ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। বরিশাল বিভাগজুড়ে ভক্তদের আকর্ষণ বৃদ্ধি করতে আকর্ষণীয় প্রতিমা নির্মাণের পাশপাশি সমান তালে চলছে সাজসজ্জার কাজ। বরাবরেই বিভাগের মধ্যে আগৈলঝাড়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পূজামন্ডবে ধর্মীয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এবারেও আগৈলঝাড়ার ১৫৪টি পূজা মন্ডপে জোরেসোরে চলছে আয়োজন। তবে এ বছরই আগৈলঝাড়া উপজেলার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ থাকছে একশ’ হাতের নির্মিত দুর্গতি নাশিনী দেবী দুর্গার প্রতিমা। উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের জলিরপাড় গ্রামের বাসুদেব ওঝার বাড়ির সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে নির্মান করা হয়েছে একশ’ হাতের ব্যতিক্রমী দেবী দুর্গার প্রতিমা। ইতোমধ্যে প্রতিমা নির্মাণের কাজ শেষ করা হয়েছে।
পঞ্জিকা মতে, আজ ২৮ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে মর্তলোকে দেবীর আগমনী বার্তা বেঁজে উঠবে। ৪ অক্টোবর ষষ্ঠীর মধ্যদিয়ে দেবীর নবপত্র কল্পারম্ভ ষষ্ঠী পূজা, ওইদিন মন্ডপে মন্ডপে বেঁজে উঠবে ঢাক-ঢোল আর কাঁসরের বাজনার শব্দ। ৫ অক্টোবর সপ্তমী পূজা, ৬ অক্টোবর মহাঅষ্টমী পুজা, ৭ অক্টোবর নবমী পূজা ও ৮ অক্টোবর দশমী বিহিত পূজা ও দশহরার মধ্যদিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী পূজার আয়োজন সমাপ্ত হবে।
আগৈলঝাড়া উপজেলার জলিরপাড় গ্রামের সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে সর্বপ্রথম একশ’ হাতের দুর্গা প্রতিমা নির্মানের উদ্যোক্তা মৃত কালী চরণ ওঝার পুত্র বাসুদেব ওঝা একশ’ হাতের দেবী দুর্গার ইতিহাস সম্পর্কে পুরাণের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন-“অদ্ভুত রামায়ন”এ দেবী দুর্গার শত হাতের বর্ণনা পাওয়া গেছে। সেই বর্ণনা অনুযায়ি রাবন বধের পরে দেবী সীতাকে সকল শংকা মুক্ত হওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন শ্রী রামচন্দ্র। দেবী সীতা তখন রামচন্দ্রকে বলেন “প্রভু-আপনি দশানন রাবন বধ করলেও ‘শতস্কন্ধ” রাবন বধ করতে পারেননি, রাবন এখনও সাগরে নিমজ্জিত হয়ে জীবিত আছে”। তখন রামচন্দ্র দেবী সীতাকে নিয়ে “শতস্কন্ধ” রাবনের খোঁজে বের হন। সাগরের মলয় দীপে ‘শতস্কন্ধ’ রাবনের দেখা পান শ্রী রামচন্দ্র ও দেবী সীতা। সেখানে শতস্কন্ধ রাবনের সাথে দেবী সীতার যুদ্ধ হয়। ওই যুদ্ধে দেবী সীতা শতহস্তে দেবী দুর্গার রূপ ধারণ করে ‘শতস্কন্ধ’ রাবন বধ করেন। সেই রূপেই দেবী দূর্গা পুজিত হয়েছেন।
একশ’ হাতের দুর্গা পূজার আয়োজন সম্পর্কে বাসুদেব ওঝা আরও বলেন, ৩০ বছর ধরে তাদের বাড়িতে সার্বজনীন দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। হোমিওপ্যাথী চিকিৎসক হিসেবে সিলেটে অবস্থানকালীন সর্বপ্রথম একশ’ হাতের দুর্গা পূজা দেখে তিনি আকৃস্ট হয়েছেন। তার এক বোনের মেয়ের ২০ বছরের দাম্পত্য জীবনে কোন সন্তান না হওয়ায় শত হাতের দুর্গা পূজা মানত করেন। দুই বছর আগে তার বোনের মেয়ের (ভাগ্নি) একটি একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে। সেই উদ্দেশ্যেই তিনি একশ’ হাতের দেবী দুর্গার প্রতিমা নির্মান করে পূজার আয়োজন করেছেন।
উপজেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির নেতৃবৃন্দরা জানান, বরিশাল বিভাগের সবচেয়ে বেশী পূজা আগৈলঝাড়ায় অনুষ্ঠিত হলেও একশ’ হাতের ব্যতিক্রমী দুর্গা প্রতিমা এই প্রথম নির্মাণ করা হয়েছে। শত হাতের দেবী দুর্গার নির্মান শিল্পী মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা মানিক বাউরী পালের পুত্র ছন্টু বাউরী জানান, বংশপরস্পরায় তারা প্রতিমা তৈরীর কাজ করছেন। ৬০ হাজার টাকায় তারা বাসুদেব ওঝার বাড়িতে ২০দিন কাজ করে একশ’ হাতের দুর্গা প্রতিমার নির্মান কাজ সম্পন্ন করেছেন। এ বছর বাসুদের ওঝার বাড়ি ছাড়াও তাদের নিজ এলাকার পূর্ব শিমুলিয়া শম্ভু ভট্টাচার্যের বাড়িতে একশ’ হাদের দুর্গা প্রতিমা নির্মানসহ মোট চারটি প্রতিমা নির্মান করেছেন।
আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল চন্দ্র দাস বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদ্যাপনের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। উপজেলায় ১৫৪টি পূজা মন্ডপে সহায়তার জন্য সরকারীভাবে ৭৭ মেট্টিক টন জিআর চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। সে হিসেবে প্রতি পূজা মন্ডপে পাঁচশ’ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। থানার ওসি আফজাল হোসেন বলেন, অসাম্প্রদায়িক উপজেলা হিসেবে পরিচিত আগৈলঝাড়ায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন রয়েছে। মন্ডপগুলোতে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সদস্যদের তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সদস্যরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন।